বিনম্র শ্রদ্ধায় পাবনার সাতবাড়িয়া গণহত্যা দিবস পালন

শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি, শোক র‌্যালী ও দোয়া অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচিতে পাবনায় সাতবাড়িয়া গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। বৃহঃস্পতিবার সকালে গণকবর ও বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানায় প্রবাসী শহীদ পরিবারের সংগঠন স্মরণে ৭১ প্রজন্ম। এ সময় গণহত্যায় শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।

পরে, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে সাতবাড়িয়া কলেজ মাঠে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা। এ সময় বক্তব্য রাখেন, শহীদ পরিবারের সদস্য ওমর ফারুক, স্মরণে ৭১ প্রজন্মের সমন্বয়ক জাহিদ বাবুসহ স্থানীয়রা।

১৯৭১ সালের ১২ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে গ্রামের নিরীহ মানুষের ওপর বর্বরোচিত হামলা করে। স্থানীয় রাজাকার আলবদর বাহিনীর সহায়তায় ৬ শতাধিক নারী-পুরুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে অধিকাংশ মরদেহ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। কিছু মরদেহ স্থানীয়রা উদ্ধার করে গণকবর দেয়।

শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও এসব শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। সাতবাড়িয়ায় শহীদ ও যুদ্ধাহতদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্তির দাবী জানান তারা।

আরো পড়ুন :
নড়াইলে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান-২০২২ এর উদ্বোধন
দৌলতপুরে যুবজোট নেতাকে রগ কেটে হত্যা

শহীদ পরিবারের সদস্য বাকি বিল্লাহ বকুল বলেন, ১৯৭১ সালের ১২ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমার পিতা নায়েব আলীকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। তার ক্ষতবিক্ষত শরীরের কথা মনে হলে আজও আমরা আঁতকে উঠি। বাবাকে হত্যার সময় আমি খুবই ছোট ছিলাম। তার মৃত্যুতে আমাদের পরিবারকে চরম মূল্য দিয়ে হয়েছে। বাবাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে এতিম হয়ে মানুষের দুয়ারে সহায়তা নিয়ে আমি বড় হয়েছি। কিন্তু রাষ্ট্র এখনো আমার বাবাকে মূল্যায়ণ করেনি। আমি সাতবাড়িয়ায় শহিদসহ মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের রাষ্ট্রীয় তালিকায় স্থান দেয়ার দাবি জানাই।

স্মরণে ৭১ প্রজন্মের আহবায়ক হাসান জাহিদ কমল বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়েছে। সরকারের আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও গ্রাম পর্যায়ে শহীদদের ত্যাগের যথার্থ মূল্যায়ণ হয়নি। পাবনায় মুক্তিযুদ্ধের সময় ধূলাউড়ি, ডেমরা বাউশগাড়ী, সাতবাড়িয়াসহ বিভিন্ন গণহত্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হাজারো মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমরা এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও শহীদদের স্বীকৃতির দাবি জানাই।

সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, সাতবাড়িয়া গণহত্যা ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনা। কয়েক শত মানুষ একই দিনে শহীদ হন। তবে, শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্তের আবেদন না করায় তারা রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতাসহ সুবিধাদির আওতায় আসেনি। তারা সরকারের নিকট আবেদন করলে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়া হবে।

মে ১২,২০২২ at ১৬:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মিতা/রারি