পানিতে ভাসছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন

প্রচন্ড বৃষ্টিতে পানির উপরে ভাসছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। মাটির সাথে মিশে গেছে পাকা ধান। বিচালী বাদ দিয়েই ঘরে তুলতে হবে ধান। তারপরও শেষ নেই ভোগান্তির। আবহাওয়া বার্তায় আগামী ১৪ মে পর্যন্ত বৃষ্টির আভাস দিয়েছে। সেটাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে কৃষকের ধান পানিতেই পচে যাবে। চরম লোকসানের মুখে পড়বে কৃষক।

সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে পানির জমেছে অধিকাংশ ধানের ক্ষেতে। যেসকল জমির ধান কাটা ছিল তা পানির উপরে ভাসছে। গত তিনদিন বৃষ্টিবিহীন রোদ দেখা দেয়ায় মাঠের প্রায় অর্ধেক ধান কেটে ফেলেছে কৃষক। সেসকল ধান শুকানোর জন্য মাঠেই ছিল। কিছু কিছু ধান শুকিয়ে জালি (গাদা) দিলেও অধিকাংশ ধান মেলানো আছে। বৃষ্টিতে সেসব কাটা ধান পানির উপরে ভাসছে এবং পাকা ধান যা কাটা হয়নি, তা মাটি ও পানির সাথে মিশে আছে।

সোমবার বিকালে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, কানাইরালী, সাদিপুর, হাজিরবাগ, সোনাকুড়, যুগিহুদা, দিঘড়ী, বাইশা ও শিত্তরদাহ গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে কয়েকশ হেক্টর জমিতে পাকা কাটা ধান পানিতে ভাসছে। ধান বাাঁচাতে অনেক কৃষক বৃষ্টির মধ্যেও মাঠে গিয়ে ধান ডাঙ্গায় তুলতে দেখা যায়। আবার ক্ষেতের পানি দ্রæত নিষ্কাশনের জন্য জমিতে আইল কাটতে দেখা যায়। চলতি বছরে ইরি ধানে বাম্পার ফলন হয়েছিল। ঠিকঠাকভাবে ধান গোছাতে পারলে লাভবান হওয়ার কথা ছিল কৃষকের।

কিন্তু সে আশায় যেন সৃষ্টিকর্তা বাধ সেধেছে। রমজানের পরে যখন কৃষক ধান কাটা শুরু করবে তখন থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গত তিনদিন বৃষ্টি না হওয়ায় অধিকাংশ কৃষক ধান কেটেছে। কিন্তু সোমবারের হঠাৎ বৃষ্টিতে কৃষকের স্বপ্ন ভাঙ্গতে শুরু করেছে। ধান নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছে তারা। বৃষ্টিতে আটকে গেছে তাদের সোনালী স্বপ্ন। বৃষ্টির কারণে বিচালীর সংকট দেখা দিতে পারে। এছাড়াও দিনমুজুর শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে এবং মুজুরি ও ধান আনা-নেয়া খরচ বেড়ে গেছে।

নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আব্দুল জলিল জানান, মাঠে তার আড়াই বিঘা ধান কাটা আছে। যা পানির উপরে ভাসছে। বৃষ্টিযদি আর না হয়, তাহলে ধান-বিচালী বাড়ি আনতে পারবো। তা নাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন :
শ্রেষ্ঠ এসআই শিবগঞ্জ থানার স্বপন মিয়া
দাগনভূঞায় চাঁদাবাজী মামলায় ছাত্রলীগ নেতা শ্রী ঘরে

বৃষ্টির সময় তবিবর রহমানের ছেলে হেলাল উদ্দীন ও তার স্ত্রীকে ধান ডাঙ্গায় তুলতে দেখা গেছে। তারা জানান, অন্যের জমি লিচ নিয়ে ধান করেছি। ধান হোক বা না হোক লিচের টাকাতো দিতেই হবে। এছাড়া বাড়িতে ২/৩ টা গরু ও কয়েকটা ছাগল আছে। বিচালী না হলে তা বিক্রি করে দিতে হবে।

আনোয়ার হোসেন নামে এক কৃষক জানান, এবার বিচালী করা যাবে না। কোনভাবেই ধানগুলো হয়ত বিচালী বাদে আটি কেটে বাড়ি আনতে হবে। এজন্য বিচালী সংকট দেখা দিবে চরম আকারে। বিচালী কিনতে পাওয়া যাবে না এবং যা পাওয়া যাবে তার দাম থাকবে খুব বেশি।

আব্দুর রশিদ জানান, বৃষ্টির কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। সব কিছুর মূল্য বেড়ে গেচে। এক বিঘা ধান গরুর গাড়িতে বয়ে বাড়ি তুলতে খরচ দেড় হাজার টাকা। শ্রমিক একবেলা ৮শ টাকা। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। সকলে নিজের কাজ গোছাতে ব্যস্ত পড়েছে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ইরি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ২শ হেক্টর জমি। ধান উৎপাদিত হয়েছে ১৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় ৯শ হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিকে উচ্চ ফলনশীল (উফশী), যার মধ্যে ব্রি-৪৯ ধান ৪ হাজার ৪শ হেক্টর, স্বর্ণঅ ৭ হাজার ২শ হেক্টর ও প্রতীক ৩হাজার ৬শ হেক্টর, বিনা-৭ এক হাজার ৪শ হেক্টর এবং হাইব্রীড জাতের ধান চাষ হয়েছে এক হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও কয়েক রকমের চিকন ও মোটা ধানের চাষও হয়েছে।

মে ০৯,২০২২ at ১৯:১০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআ/রারি