রুখবে আমায় কে ? সিক্স পার করে এখন ক্লাস এইটে!!

ক্লাস এইটের এক বালিকা ধর্ষনের শিকার হয়েছে; ধর্ষক তার বাবার সহপাঠী, ঘরে বউ বাচ্চা আছে- মামলার কাগজপত্র এমনই বলছে।
বড়ই দু:খ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মামলা তদারকি করতে হাজির হলাম।বাদীর বাড়ি পাওয়ার আগেই রাস্তায় ঘটনাস্থল। তদন্তকারী কর্মকর্তা সহ মামলার ঘটনাস্থলে নেমে গেলাম আমরা। সেখানে গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে অভিযোগ আর বাস্তবতার সাথে ফারাক মনে হলো ফারাক্কার বাঁধ পরিমান। তাহলে আসল ঘটনা কি?

মেয়েটার বয়স মাত্র ১৫ বছর! মাত্র বলছি এজন্য যে এ বয়সেই সে ৩০ বছর ঊর্ধ একজনের সাথে পালিয়ে গিয়ে ধানক্ষেতের পাশে একটি স্যলো মেশিন ঘরে রাতে সময় কাটায়। সেখান হতে দূরে পালিয়ে যাওয়ার প্লান ছিল। কিন্তু ঘর মালিকের তথ্যের ভিত্তিতে তাকে সেখান হতে ধরে আনে এলাকার লোকজন। ধরে আনার পর বালিকা বিবৃতি দেয় সে লোক তার অনুমতি ছাড়া তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। জানাজানি হয়েই গেছে! তাই, পরদিন চিন্তা-ভাবনা করে স্বাভাবিকভাবেই লোকটির বিরুদ্ধে ধর্ষনের মামলা ঠুকে দেয় তার মা, তার আগেই আসামি পালিয়ে গিয়ে পুলিশের আরামের শ্রাদ্ধ করে।

একজন শিশুর সাথে এমন আচরণ – খুবই গর্হিত কাজ। কিন্তু,মেয়ে এবং সেই লোকের মোবাইল ফোনের এসএমএস চেক করে দেখা যায় তারা নিজেরাই প্লান করে পালিয়ে যায়! মায়ের কড়া শাসনে অস্থির হয়ে মেয়ে নিজেই তাকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবনা দিয়ে মেসেজ দেয়! আরো জানা যায়, বালিকা তার মা বোনকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে এসেছিল।

কিন্তু শিশুর তো মতামতের কোন মূল্য নেই; কাজের কোন ভুল নেই ! কথায় আছে, বাচ্চাদের সাথে কোন সিরিয়াস সম্পর্কের অবতারণা করতে নেই (কে বলেছে জানি না)! সাবালকরাই কখন কি বলে ঠিক নেই, বালিকা তো তালিকায়ই পড়ে না!!

যা হোক, কথা ছিল ঘটনাস্থল দেখে সেখানকার কিছু সাক্ষী সাবুত নিয়ে বালিকার বাড়িতে গিয়ে তার সাথে কথা বলব, তাকে সান্তনা দিব, ন্যায় বিচারের অংগীকার দিব। কিন্তু ও মা, সে কি!! বাড়িতে যাওয়ার আগেই বাতাসে গুঞ্জন অঞ্জলি (ছদ্ম নাম) আবার পালিয়েছে!!

জীবনে এমন অনেক দেখেছি। সারাদিন ঢালিউডি-বলিউডি প্রেমের গান শোনা এসব মেয়েদের ধরে এনে কদাচিৎ লাভ হয়। আদালতে কিছু একটা বলে এসেও অনেকে আবার পালায়। ২ বার পালায়, ৩ বার পালায়- পুলিশের সাথে লুকোচুরি খেলে! মামলা শেষ করতে এসব তথাকথিত ভিক্টিমদের পেছনে বিরক্ত মুখে পুলিশও দৌড়াতে থাকে।

এসব যখন ভাবছিলাম ঠিক তখনই শুনলাম অঞ্জলি যে অন্য মেয়েদের মত নয়!!! এ মেয়ে তো সেই লোকের সাথে পালায় নি!! আরেকটি ছেলের সাথে পালিয়েছে!!

এই ২ দিনের ব্যবধানে সে কি তবে আরেকটি প্রেম ….? না আর নিতে পারছিলাম না, বাইরে গরম ৪২ ডিগ্রি… আরেকটা মামলা হোক- আবার আসব নে …

লেখাপড়ায় উতসাহ দিতে ও স্কুল হতে ড্রপ-আউট রোধ করতে স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে একটা স্লোগান ছিল, “আমি এখন সিক্সে, রুখবে আমায় কে?” কিন্তু মেয়েটি কি বুঝলো কে জানে! গল্পের মেয়েটি সিক্স পার করে ক্লাস এইটে; আর তাকে রুখার শক্তি আসলেই কারো নেই। সব জিদ, মোটিভেশনকে সে প্রেমে রূপান্তরিত করেছে ! লেখাপড়ায় কেমন জানি না, তবে আপাতত তার স্লোগান হলো- পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া??!
খাঁটি বাংলায়, রুখবে আমায় কে??

লেখক: দিনার মোহাইমেনুল
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
ঝিনাইদহ।