ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ কমাতে প্রস্তুত লঞ্চ-ফেরি-স্পিডবোট

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের কাছে দুর্ভোগের দিনও যেন এগিয়ে আসছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম নৌরুট মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া। এই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট হয়ে ঈদ মৌসুমে দৈনিক লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয়।

ঈদের আগে ঘরে ফেরা এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলে যোগ দেওয়া মানুষের ঢল নামে এই দুই ঘাটে। অধিক যাত্রীদের চাপে এসময় শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। স্পিডবোটসহ নৌযানে শুরু হয় বাড়তি ভাড়ার উৎসব! এসব নৌযানে ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রী পারাপার করা হয়। সব মিলিয়ে এক দুর্ভোগের ঈদযাত্রায় পরিণত এই নৌরুট।

এদিকে গত এক বছর ধরে নৌরুটে ফেরি চলছে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে। গতবছর করোনার কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। তারপরেও ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে ফেরিতে পদ্মাপার হয়েছেন মানুষ। এক বছর ধরে কখনো দীর্ঘদিন ফেরি বন্ধ, আবার কখনো কিছু সময় চলাচলসহ সীমিত সংখ্যক ফেরি শুধু দিনের বেলায় চলছে নৌরুটে। আর বন্ধ রাখা হয়েছে ভারী যানবাহন চলাচল। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাত্র পাঁচ/ছয়টি ফেরি দিয়ে নৌরুট সচল রাখা এক ধরনের প্রহসনও বলছেন এই রুট ব্যবহারকারীরা

বিআইডবিøউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চঘাট সূত্র জানিয়েছে, ঈদের আগেই সবগুলো লঞ্চের রুট পারমিট, সার্ভে সনদসহ টুকটাক মেরামত সম্পন্ন করে নিয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ। ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে নৌরুটে পারাপার হওয়া যাত্রীরা জানিয়েছেন, কোনো কোনো লঞ্চে জীবনরক্ষাকারী বয়া বেশি থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চেই তা পর্যাপ্ত নেই। তাছাড়া লাইফ জ্যাকেটও দেখা যায় না লঞ্চে। প্রতিটি লঞ্চে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী পারাপার করা হয়ে থাকে। লঞ্চের ভেতরে উপরে ও নীচে পর্যাপ্ত বয়া এবং লাইফ জ্যাকেট রাখা উচিত। অথচ তা নেই।

বিআইডবিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শুধু দিনের বেলায় বাংলাবাজার শিমুলিয়া নৌরুটে রোরো ফেরি সুফিয়া কামালসহ মোট ৫টি ফেরি চলাচল করছে। সকাল ৮ থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়ে ৫টা পর্যন্তচলে। এছাড়া মাঝিকান্দি-শিমুলিয়া রুটে চলে ২টি ফেরি। দুই নৌরুটে মোট ৫টি ফেরি চলাচল করছে।

গাড়ির চাপ বাড়লে বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় যানজট বাড়ে। টার্মিনালে দীর্ঘক্ষণ সিরিয়ালে থাকতে হয় ফেরিতে ওঠার জন্য অপেক্ষমান যানবাহনগুলোকে। এই রুটের ফেরিতে এখনোও ব্যক্তিগত যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স ও ছোট ছোট যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। বন্ধ আছে পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস পারাপার।

আরো পড়ুন :
ভোমরার ব্যবসায়ীরা আছে জিম্মিদশায়, দিনে খোয়াচ্ছে ৮০লক্ষ টাকা
মদনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেল ৩০ পরিবার

লঞ্চে ঢাকা থেকে আসা যাত্রী মো. সেলিম মিয়া বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ছে। সামান্য বাতাস হলেই ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। ঈদের ছুটিতে নৌরুটে যাত্রীদের ঢল নামে। এসময় লঞ্চ ও স্পিডবোট কঠোর প্রশাসনিক নজরদারিতে রেখে চালানোর দাবি জানাচ্ছি। তাছাড়া নৌযানে পর্যাপ্ত সংখ্যা জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকা প্রয়োজন। সে তুলনায় কিছুই দেখা যায় না।

আরেক যাত্রী মো. জলিল বেপারী বলেন, বর্তমান সময়টা হচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়ের। হঠাৎ করেই আবহাওয়া খারাপ হয়ে উঠতে পারে। ঈদ যাত্রায় অধিক সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী যেন নৌযানে বহন করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) বাংলাবাজার লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে, নৌরুটে বর্তমানে ৮৭টি লঞ্চ রয়েছে। পাশাপাশি শতাধিক স্পিডবোট চলছে। লঞ্চগুলোর মধ্যে বড় লঞ্চের সংখ্যাই বেশি। যা দুই শতাধিক যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। এছাড়া ১৩৫ ও দেড়শ যাত্রী বহনে সক্ষম লঞ্চ রয়েছে ১০ থেকে ১২টি। যেসব লঞ্চে ছোটখাটো ত্রুটি ছিল তা ইতোমধ্যেই মেরামত করা হয়েছে। তাছাড়া ঈদের ভিড় হওয়ার আগেই লঞ্চগুলো আরও একবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। লঞ্চে বর্তমানে ৪৫ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ঈদে ভাড়া বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে নৌরুটের উভয় ঘাট মিলিয়ে শতাধিক স্পিডবোট রয়েছে। যা নিবন্ধিত। ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নৌযানগুলো যাত্রী পারাপার করছে।

বিআইডবিøউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-মাঝিকান্দি নৌরুটে ৭টি ফেরি চলাচল করছে। তবে ঈদুল ফিতরের বাড়তি চাপ কমাতে আমাদের ফেরির বহরে সংযোজন করা হবে আরও ৩টি ফেরি। মোট ১০টি ফেরি চলাচল করবে এক নৌরুটগুলোতে। ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।

বিআইডবিøউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চ ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার উজ্জামান বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমাদের বাংলাবাজার ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ঘাট থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমাদের এখানে প্রতিটি লঞ্চের ফিটনেস, মাস্টার ড্রাইভার, নাবিক, বয়া, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ঠিক রেখেই চলাচল করবে প্রতিটি লঞ্চ। ধারণ ক্ষমতার বাহিরে একটি যাত্রীও ওঠানো হবে না কোনো লঞ্চে।

এপ্রিল ২৬,২০২২ at ১৯:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/রারি