শ্রীলঙ্কার পর নেপালের অর্থনীতিতে কালোছায়া

লেবানন ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। আর্থিক সংকটে জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। চরম অর্থসংকটে শ্রীলঙ্কায় যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তখন দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপালের অর্থনীতিতেও ঘনিয়ে আসছে আশঙ্কার কালোছায়া।

অনেকের মতে, অদূর ভবিষ্যতে নেপালের অবস্থা হতে পারে শ্রীলঙ্কার চেয়েও ভয়াবহ। আসন্ন এই বিপদ এড়াতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শ্রীলঙ্কার চারদিকে এখন শুধুই হাহাকার। চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, কাগজ আমদানির মতো বৈদেশিক মুদ্রা তাদের কাছে নেই। বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রটি। সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধেরও অবস্থা নেই তাদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না দেশটি। ফলে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে ভুগছে দেশটি।

শ্রীলঙ্কার মতো নেপালও ধীরে ধীরে এমন গভীর অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন-ইউএমএল)।

চলতি সপ্তাহে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দলটির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা বিষ্ণু পাউদেল, সুরেন্দ্র পাণ্ডে ও ড. যুবরাজ খতিবাদা বলেছেন, নেপালের অর্থনীতি সংকটে রয়েছে এবং দ্রুত আরও বাজে পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। তাৎক্ষণিক ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন সিপিএন-ইউএমএলের ভাইস চেয়ারম্যান বিষ্ণু পাউদেল। নেপালের অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হওয়া ঠেকাতে অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির আরেক শীর্ষনেতা সুরেন্দ্র পাণ্ডে বলেন, সব পণ্যের দাম বাড়ায় এ বছর মূল্যস্ফীতি দুই অংকে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়া, ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সক্ষমতার অভাব, বেসরকারি খাতের দুর্বল মনোবল ও সরকারের ক্রমহ্রাসমান উন্নয়ন ব্যয়ের কারণে নেপাল মূলধন ব্যয় বাড়াতে পারবে না।

আরো পড়ুন:
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে ইংল্যান্ড
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া খাদ্য সহায়তায় ৩০ কেজির চালে দুই কেজি কম

সাবকে অর্থমন্ত্রী যুবরাজ খাতিবাদা বলেছেন, দেশটির অর্থনীতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে এবং বাহ্যিক খাতের ভারসাম্যহীনতা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

গত ১০ এপ্রিল নেপাল সরকার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মহা প্রসাদ অধিকারীকে বরখাস্ত করেছে। অর্থনীতিকে সংকটময় অবস্থা টেনে তুলতে ব্যবস্থা না নেওয়া এবং নেপালি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের (এনআরবি) তথ্যমতে, হিমালয়ান দেশটির মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ৯৭৫ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় অন্তত ১৭ শতাংশ কম। ক্রমবর্ধমান আমদানি এবং রেমিট্যান্স, পর্যটন ও রপ্তানি থেকে আয় কমে যাওযায় ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকেই নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী।

এই ধারা ঠেকাতে সম্প্রতি গাড়িসহ বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। এনআরবির মুখপাত্র গুণখার ভট্ট চলতি মাসের শুরুর দিকে বলেছিলেন, ক্রমবর্ধমান আমদানির কারণে অর্থনীতিতে একধরনের সংকট দেখা দিতে পারে, এমন লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাই অবিলম্বে আবশ্যক নয় এমন পণ্য আমদানি বন্ধের বিষয়ে আলোচনা চলছে। সূত্র: টাইমস নাউ

এপ্রিল ১৪.২০২২ at ১৮:০০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জানি/জআ