হিন্দু পার্বণে মাংসের দোকান বন্ধের নির্দেশ নিয়ে বিতর্কের ঝড়

নবরাত্রির সময় সিংহভাগ হিন্দু মাছ-মাংস অর্থাৎ আমিষ খান না, দোকানে মাংস দেখে তারা অস্বস্তিতে ভোগেন। এমনই অভিযোগর ভিত্তিতে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সব মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে নগর কর্তৃপক্ষের এক নির্দেশের পর বহু দোকানে গত দুদিন ধরে মাংস বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

মহিষাসুরের বিরুদ্ধে লড়াইতে হিন্দু দেবী দুর্গার বিজয় উদযাপন উপলক্ষে নয়দিন ধরে নবরাত্রি উদযাপন করা হয়। ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের অনেকে এ সময়ে মাংস খান না। অনেকে এমনকী পেঁয়াজ-রসুনও খান না।

দিল্লির দক্ষিণ ও উত্তরের মেয়ররা যুক্তি দিয়েছেন নবরাত্রির নয় দিনে সিংহভাগ হিন্দু মাছ-মাংস অর্থাৎ আমিষ খান না, এবং অনেকে তাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন।

মাংস বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিক্রেতারা বলছেন, এ ধরণের সিদ্ধান্তে ভারতের বহুত্ববাদ লঙ্ঘিত করা হচ্ছে।

এক সূত্রে জানা যায়, মাংসের দোকান বন্ধ রাখা নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি দিল্লির সরকার। যে দুই মেয়র ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছেন তারা ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এমনকি বলেছেন নির্দেশ অমান্য করলে জরিমানা করা হবে।

এই নির্দেশের কড়া সমালোচনা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকে বলছেন কারো মাংস না খাওয়ার যুক্তিতে অন্যের মাংস খাওয়ার অধিকার বা অন্যের জীবিকার অধিকার লঙ্ঘন করা যায়না।

আরো পড়ুন:
ইউক্রেনে ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বিয়ের আয়োজন
ক্ষেতলালে পুকুর থেকে গনেশ মূর্তি উদ্ধার

ভারতের পার্লামেন্ট লোকসভার সদস্য এবং পশ্চিমা বাংলার ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী মহুয়া মৈত্র তার এক টুইটে লিখেছেন, “ভারতের সংবিধান আমার খুশিমতো যে কোনো সময়ে খাওয়ার অধিকার দিয়েছে।”

জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ তার এক টুইটে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন – তাহলে কি রোজার মাসে মুসলিম প্রধান এই রাজ্যে সমস্ত অমুসলিম এবং পর্যটকদের জনসমক্ষে খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়া যাবে?

টুইটারে একজন লিখেছেন, “হোটেলে গিয়ে মাংস খাওয়া চলবে। অনলাইনে বিক্রেতারা মাংস সরবরাহ করতে থাকবেন। কিন্তু গরীব মুসলিমদের মাংসের দোকান খোলা রাখলেই শুধু হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।”

দক্ষিণ দিল্লি পৌর কর্পোরেশনের মেয়র মুকেশ সুরায়ান চৌঠা এপ্রিল এক চিঠিতে বলেন, “ভক্তরা যখন পূজা দিতে যাওয়ার সময় মাংসের দোকানের পাশ দিয়ে যান, সেসব দোকান থেকে আসা গন্ধ যখন তাদের নাকে যায়, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুভূতিতে আঘাত লাগে।”

পূর্ব দিল্লির মেয়র শ্যাম সুন্দর আগারওয়াল বলেন, “যদি কেউ এ সময়ে মাংস বিক্রি করেন, সেই মাংস হয় পচা হবে – না হয় অবৈধভাবে জবাই করা পশুর মাংস হবে। সুতরাং আমি ১৬টি পর্যবেক্ষণ দল গঠন করে দিয়েছি যারা এ ধরনের মাংস ব্যবসায়ীর ওপর নজর রাখবে এবং প্রয়োজনমত ব্যবস্থা নেবে।”

মাংসের দোকান বন্ধ রাখার জন্য দক্ষিণ দিল্লি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা জারী করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।

অনেক দোকান মালিক এমন কোনো নির্দেশনা না পেলেও ভয়ে তারা বন্ধ রেখেছেন বলে রিপোর্ট করেছে ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

যদিও সাধারণ একটি বিশ্বাস রয়েছে যে ভারতের সিংহভাগ মানুষই মাংসভোজী নন, গবেষণা বলছে সে দেশের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ নিরামিষাশী। ভারতের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই হিন্দু এবং তারাই মাংসের প্রধান ভোক্তা। রাজধানী দিল্লির বাসিন্দাদের বড়জোর এক-তৃতীয়াংশ নিরামিষাশী, এবং দিল্লি ভারতের ‘বাটার-চিকেন ক্যাপিটাল’ বলে খ্যাতি পেয়েছে। খবর : বিবিসি

এপ্রিল ০৬.২০২২ at ২০:২৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বিবিসি/জআ