ইউক্রেনে ইয়ানুকোভিচকে ফের ক্ষমতায় চান পুতিন!

ইয়ানুকোভিচ। ফাইল ছবি

রুশ আক্রমণের অষ্টম দিনে ইউক্রেন নিয়ে নিজেদের চিন্তাভাবনা স্পষ্ট করেনি ক্রেমলিন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ইতোমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে ইউক্রেনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে পারেন, তা নিয়ে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে আমেরিকাসহ বিভিন্ন ন্যাটো দেশ নিজেদের ‘বন্ধু’ দাবি করে অস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের জোগান দেয়ার আশ্বাস দিলেও রাশিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতে জড়াবে না বলেও স্পষ্ট করেছে।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেও সেনা সজ্জা গায়ে তুলেছেন। বন্দুক নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হবে কিনা, এ নিয়ে ধন্দে রয়েছে সারা বিশ্ব। রুশ হামলার মুখে পড়েছে কিয়েভ। পতন হলে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের দায়িত্ব কে সামলাবেন, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। এই আবহে যার নাম ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম উঠে আসছে, তিনি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। কে তিনি? অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৫০ সালের ৯ জুলাই ইউক্রেনের ইয়েনাকিভ শহরে ইয়ানুকোভিচের জন্ম। ১৯৬৭ সালে ডাকাতির অভিযোগে তিন বছর এবং ১৯৭০ সালে মারামারির কারণে ২ বছর জেলও খেটেছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালে ইয়েনাকিভের নগর আদালতের বিচারপতির ভাইঝি লুদিমিলা নাসটেনকোকে বিয়ে করেন ইয়ানুকোভিচ। ১৯৯৬ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন ইয়ানুকোভিচ। ইউক্রেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিওনিদ কুচমা তাকে ২০০২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। ২০০৫ পর্যন্ত তিনি সেই পদে ছিলেন। এরপর তিনি ২০০৬ সালে নির্বাচিত হয়ে আবার ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন। অতঃপর ২০১০-এ তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে শামিল হন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন ইয়ানুকোভিচ। ২০১০ সালে ভিক্টর ইউসচেনকো প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরলে তিনি সেই আসনে বসেন। কিন্তু ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রাজনীতিতে গণবিক্ষোভে রাজনৈতিক পালাবদল হয়। ইউক্রেন ছেড়ে রাশিয়া পালিয়ে যান ইয়ানুকোভিচ। পুতিনের ছত্রছায়ায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে ঠাঁই হয় ইয়ানুকোভিচের। পুতিনের বিশ্বস্ত হিসেবেও পরিচিত হন তিনি।

কিয়েভ নিয়ে ক্রেমলিনের চিন্তাভাবনা স্পষ্ট না হলেও পুতিন বর্তমান জেলেনস্কি সরকারকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করছে বলেই মত আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। জেলেনস্কিকে সরিয়ে ইয়ানুকোভিচকে ইউক্রেনের গদিতে বসালে পুতিনের ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে বলেও মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। তবে সেক্ষেত্রেও একটি প্রশ্ন থাকছে। ইয়ানুকোভিচকে জোর করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার শর্তে আপাতত ইউক্রেনবাসী তা মেনে নিলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা এই ব্যবস্থা মানবেন কিনা, বলা কঠিন। রাশিয়ার আক্রমণের চোখরাঙানি কত দিন ইউক্রেনবাসী মেনে নেন, তা অবশ্য কেউই নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।