মনোহরদীতে উদ্ধার হওয়া লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি সিরাজগঞ্জ সদরের রায়পুর রেলওয়ে কলোনি এলাকার মুসলিম উদ্দিনের ছেলে মিঠু হোসেন (২৪)। তিনি অনলাইনে বিভিন্ন শাড়ির ব্যবসা করতেন। এ ঘটনায় মিঠুর বড় বোন মিনু আক্তার বাদী হয়ে মনোহরদী থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে হত্যামামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ হত্যাকারীদের শনাক্তে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মামলার বাদী হয়ে তার বোন আরো জানান, গত বুধবার ভোরে শাড়ি কেনার জন্য নরসিংদীর উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন মিঠু। সন্ধ্যায় মায়ের মুঠোফোনে কল করে নরসিংদী পৌঁছানোর কথা নিশ্চিত করেন তিনি। ওইদিন রাত ৮টার দিকে আবারও ফোন দিয়ে মিঠু জানান, কয়েকজন লোক তাকে অপহরণ করেছে এবং এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। অপহরণকারীরা মিঠুকে মারধর করে তাদের দেওয়া মোবাইল ব্যাংককিং নাম্বারে দ্রুত টাকা পাঠাতে বলেছে। ওই রাতেই মিঠুর পরিবার থেকে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। একই রাত ১১টার দিকে মিঠু ফোন করে মাকে জানান, ‘তোমরাতো টাকা দিতে পারলে না।
অপহরণকারীরা মনে হয় আমাকে মেরে ফেলবে। কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিও।’ এ সময় অজ্ঞাত ব্যক্তি তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে মিঠুর বোনকে বলে, ‘যেহেতু টাকা দিতে পারসনি তাই তোর ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না। আগামীকাল তার ভাইয়ের লাশ খুঁজে নিস।’ এর পর থেকে মিঠুর মোবাইল বন্ধ থাকে। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে মিঠুর খোঁজে তার মা, বোন এবং নানি নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা হন। সকাল ১০টার দিকে অজ্ঞাত ব্যক্তি মিঠুর মোবাইল থেকে মিনুকে ফোন দিয়ে পুনরায় মুক্তিপণ দাবি করে। এ সময় তিনি মিঠুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপহরণকারী বলে, ‘আগে টাকা দেন, তারপর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন।’ এ কথা বলে আবারও মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জের পরিচিত এক সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারেন, মনোহরদী উপজেলায় অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
খবর পেয়ে মিঠুর মা-বোন দ্রুত মনোহরদী থানায় উপস্থিত হন। পরে পুলিশের মোবাইল ফোনে ছবি দেখে মিঠুর লাশ শনাক্ত করেন তারা। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগোলিয়াপাড়া এলাকার রূপচান মিয়ার খড়ের পালার পাশে অজ্ঞাত ওই যুবকের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, পুলিশের একাধিক দল হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারীরা অন্য কোনো স্থানে মিঠুকে হত্যা করে লাশ এখানে ফেলে গেছে। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
ফেব্রুয়ারি ১৯.২০২২ at ১৩:৫৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/রপত/এমএইচ