দৌলতপুরের ৯ ইটভাটায় অভিযান, ২৯ লাখ টাকা জরিমানা, জনমনে প্রশ্ন

 কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালান পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় সরকারি নিয়মনীতি ভঙ্গ করে অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটায় অভিযান চালিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ৯টি ইটভাটাকে ২৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে এই অভিযান শুরু হয়ে দিনভর চলে। এতে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পরভীন। এদিকে এই অভিযান নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, জেলার বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা থেকে পাঠানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দিনভর দৌলতপুর উপজেলায় অভিযান চালানো হয়। সরকারি নীতিমালা না মেনে পরিবেশ আইন লংঘন করে ইটভাটা স্থাপন ও জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর দায়ে উপজেলার ২৬টি ইটভাটার মধ্যে ৯টিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযান চলে।

পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পরভীনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে উপজেলার কোলদিয়াড় গ্রামে এমজিবি ব্রিকসকে ৪ লাখ টাকা, সাদিপুর গ্রামে এএলএলবি ব্রিকসকে ১ লাখ টাকা, এনএসআর ব্রিকসকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিএন্ডবি ব্রিকসকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সরুপপুর গ্রামে এবিএস ব্রিকসকে ৪ লাখ টাকা, এসবিসি ব্রিকসকে ৩ লাখ টাকা, এনবিসি ব্রিকসকে ৫ লাখ টাকা, জয়রামপুর গ্রামে এনএন্ডবি ব্রিকসকে ৫ লাখ টাকা এবং এমএমজে ব্রিকসকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এ অভিযানকালে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক আতাউর রহমান, সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিতি ছিলেন। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা অনুমোদন ছাড়াই উপজেলায় অবৈধভাবে ২৬টি ইটভাটা চলে আসলেও এর মধ্যে ৯টিতে অভিযান চালানোর ঘটনাকে ভিন্নভাবে দেখছেন এখানকার সচেতন লোকজন। এ নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। তারা এই অভিযানকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেকটিভ অভিযান হিসেবে মনে করছেন। তাদের ধারণা, কর্মকর্তারা ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে আগে নির্ধারণ করে রাখা ইটভাটাগুলোতেই কেবল এই অভিযান চালিয়েছেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মানুষের এমন ধারণা সঠিক নয়। ঢাকা থেকে আসা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এ সময় তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পরভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পরভীন বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে আমরা একদিনে সব ইটভাটায় অভিযানে যেতে পারিনি। এক্ষেত্রে মানুষ যা বলছে তা ভিত্তিহীন। কিন্তু পাশের উপজেলা ভেড়ামারায় প্রথমদিনের অভিযানে প্রায় সবগুলো ইটাভাটায় অভিযান চালানো হলেও দৌলতপুরে এর ব্যত্যয় ঘটলো কেন- এমন এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পরভীন বলেন, ওইদিন অভিযানের পর বড় অঙ্কের জরিমানার টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যাংকে জমা দিতে ঝামেলা হওয়ায় আমরা অভিযান কিছুটা সীমিত করেছি। সার্বিকভাবে নিজেদের কাজের সুবিধার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সুতরাং এখানে কারা কী বললো তাতে আমাদের কিছুই আসে যায় না।

এ সময় সাঈদা পরভীন বলেন, গত বছর যেসব ভাটায় অভিযান চালানো হয়েছিল এবার সেগুলোকে খানিকটা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত বছর কোন কোন ইটভাটায় অভিযান চলেছিল সেই তালিকা কী আপনাদের ঢাকা অফিস থেকে দেয়া হয়েছে- এই প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পরভীন বলেন, না ঢাকা থেকে সেই তালিকা আমাকে দেয়া হয়নি, এই অভিযানের সময় স্থানীয় লোকজন এবং সঙ্গে থাকা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ওইসব ইটভাটায় আগের বছর অভিযান চালানো হয়েছিল।

কিন্তু আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন আর সাংবাদিকদের কথা আমলে নেয়া কী জরুরি ছিল- এমন প্রশ্নের খুব একটা সদুত্তর দিতে পারেননি এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তবে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা থেকে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে এসেছি, কারো দ্বারা প্রভাবিত বা ম্যানেজ হওয়ার জন্য আসিনি। মঙ্গলবারই কুষ্টিয়া জেলায় আমাদের শেষ অভিযান ছিল। পর্যায়ক্রমে এই জেলার অন্য ইটভাটাগুলোতেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এ অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পরভীনের নেতৃত্বে গত ২৩ জানুয়ারি ভেড়ামারা উপজেলায় প্রথম দিনের অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে সেখানকার ১৭টি ইটভাটায় ৪৩ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরের দিন সোমবার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৯টি ইটভাটায় অভিডান চালিয়ে গড়ে ২ লাখ টাকা করে ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করেন এই ভ্রাম্যমাণ আদালত। সবশেষ মঙ্গলবার দৌলতপুর উপজেলার ৯টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে ২৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের ভাম্যমাণ আদালতের এই অভিযানের কাছে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানকে লোক দেখানো অভিযান হিসেবে অভিহিত করছেন অনেকে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বার এ পর্যন্ত মাত্র দুটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।

জানুয়ারি ২৫.২০২২ at ২১:৫০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এআস/জআ