বগুড়ার গাবতলীতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। কোনেভাবেই থামছে না মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা। বেড়েই চলেছে মাদকের বিস্তার। উপজেলার মহিষাবান, নশিপুর, বালিয়াদিঘী, দূর্গাহাটাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে চলছে মাদক ব্যবসা আর এসব চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে ও অবাধ বিচরণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছে না।
আর পুলিশ প্রশাসনও এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে এইসব এলাকার সাধারণ জনগণ দাবি করছে। বিশেষ করে গাবতলী সদর, দূর্গাহাটা, কলেজ স্টেশন, কাগইল, নাড়ুয়ামালা বাজার, গোলাবাড়ী, রানীর পাড়া, বালিয়াদীঘি, তরনীহাট, কলাকোপা, কালাইহাটা, তল্লাতলা, বাগবাড়ি, নিজ গ্রাম, নসিপুরসহ বিভিন্ন এলাকা এখন বিষাক্ত হয়ে উঠেছে মাদকের কারণে। ৮/১০ জন জনপ্রতিনিধি মাদক ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
জেলা পুলিশ বগুড়ার পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দেয়া থাকলেও গাবতলীর ওইসব স্থানের চিত্রটা যেন অন্যরকম। বিভিন্ন স্থানে মাদক বিকিকিনি দৃশ্যমান না হলেও ওলি-গলিতে ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়। জেলা শহর থেকে বড় ধরনের মাদকের চালান গাবতলীর বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে আসে আর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা এসব মাদক তুলে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষাথীসহ উঠতি বয়সী যুবকদের হাতে এতে করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এসব এলাকার যুবসমাজের বড় একটা অংশ।
উঠতি বয়সের তরুণদের একটি অংশ এ নেশার জগতে পা দিয়ে ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে । অনেক অভিভাবক তাঁর মাদকাসক্ত সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশা এর মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে। এই সব স্থানে পুলিশের নাকের ডগায় বিক্রি হয় গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল। এইসব মাদক দ্রব্য ক্রয় করার জন্য ছিঁচকে চুরিসহ বড় ধরনের ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিং বেড়েই চলছে এসব এলাকায়। অবিলম্বে এ পরিস্থিতি যদি সামাল দেয়া না যায় তাহলে সামাজিক অবস্থার যে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সরেজমিনে এসব এলাকার গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় ২৫ টি স্পটে গাঁজা, চোরাই মদ, ইয়াবা ও ফেনসিডিল বিক্রি হয়ে থাকে মাদক সেবনের এসব স্পট যেন আড্ডার আখড়া।নারী-পুরুষ সকলে মিলেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও রয়েছে অভিযোগ। মাদক মামলা ও প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে অনেকে মাদক ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু নতুন করে যুবক ও শিক্ষার্থীরা যুক্ত হচ্ছেন এই ভয়াবহ ব্যবসায়। অধিক মুনাফা লাভের আশায় ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল ব্যবসায় নিজেদের কে যুক্ত করছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক মাদকসেবী জানান, আমরা এইসব মাদক এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সেবন করে থাকি পর্যাপ্ত মজুদ থাকার কারণে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করতে আমাদের বেগ পেতে হয়না।
এসব এলাকায় এমনও দেখা গেছে রাত করে যখন সন্তান ঘরে ফিরছে তখন তার মা বাবা খাবারের কথা বলা মাত্রই বলা হচ্ছে ক্ষুধা নেই। বেশিমাত্রায় অনুরোধ করলে বলা হয় বাইরে থেকে খেয়ে আসছি। অথচ বাইরে থেকে সত্যি খেয়েছে সেটা হয় ফেনসিডিল না হয় অন্য যে কোন মাদকদ্রব্য। এমন উদাহরণ দিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদকসেবীদের কিছু পরিবার।
এ অবস্থায় পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হবার পাশাপাশি বিষাক্ত হয়ে উঠছে এসব এলাকা। মাদকের কারণেই পিতামাতা ও পরিবারের স্বজনরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। লাগামহীনভাবে মাদক ব্যবসার কারণে সমাজে বেড়ে গেছে ইভটিজিং, সহ নানা ধরনের অপরাধ। এ প্রেক্ষাপটে সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি কলুষিত হবার পাশাপাশি সার্বিক অবস্থা ধ্বংসের পথে।
এ বিষয়ে গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন মাদকের সঙ্গে পুলিশের কোন আপস নেই। আমরা দিনরাত চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝে গ্রেফতার করতেও সক্ষম হচ্ছি। তবে জনগণ যদি সহযোগিতা করে তাহলে মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষে কাজ করতে সুবিধা হয়। আমরা সব সময় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে তৎপর আছি।
জানুয়ারি ২৪.২০২১ at ১৫:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/রাইর/রারি