অবশেষে দৌলতপুরের সেই চার পরিবার বুঝে পেল প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি

 কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ৬ মাস ধরে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি অবশেষে গৃহহীনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় অবশেষে তালিকাভুক্ত সেই চার গৃহহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি বুঝে পেয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতিতে নির্মাণের ছয় মাসেও সম্পূর্ণ প্রস্তুত ওই বাড়িগুলো তালিকাভুক্তদের হস্তান্তর না করে ফেলে রাখা হয়েছিল। এর ফলে এসব বাড়ি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হওয়ায় গৃহহীন পরিবারগুলোর মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। পরিবারগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়ি না পাওয়ায় এক রকম অনিশ্চিত আশঙ্কায় ভুলছিল। তাদের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) পরিবারগুলোকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ির চাবি তুলে দেয়া হলে নতুন বাড়ি পেয়ে তাদের সেই অনিশ্চয়তার অবসান ঘটে। বাড়ি প্রাপ্তি থেকে ‘বঞ্চিত হওয়ার’ ক্ষোভ মুহূর্তেই উবে যায়, খুশিতে পরিণত হয়।

গত বছর জুলাইয়ের প্রথমদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির তত্ত্বাবধানে উপজেলার মথুরাপুর বড় বাজার সংলগ্ন দর্গাতলা প্রামে নির্মাণ করা হয় চার গৃহহীন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ওই আশ্রয়স্থল। অন্যদিকে প্রায় একই সঙ্গে নির্মিত পাশের হোসেনাবাদ এলাকায়ও এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১৫টি বাড়ির মধ্যে একটি বাড়ির জায়গা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। আর ওই এক বাড়ির কারণেই নির্মাণ সম্পন্ন অপর চারটি বাড়ির বরাদ্দ ঝুলিয়ে রাখে স্থানীয় প্রশাসন। তালিকাভুক্ত এই গৃহহীন পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নতুন বাড়িতে বসবাসের অপেক্ষায় দিন গুনছিল। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের উদাসীন ভূমিকায় এতদিন তাদের মাঝে বাড়িগুলো হস্তান্তর করা হচ্ছিল না।

অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় সরকারি এসব বাড়ি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। অসৎ উদ্দেশ্যেও এগুলো অনায়াসে যে কারো ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। মাসের পর মাস পড়ে থাকায় দরজা-জানালা ও দেয়ালের ক্ষতি হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ওই বাড়িগুলো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকায় প্রতিবেশী লোকজন খড়ি শুকানো, কাপড় শুকানো, শিশু-কিশোরদের খেলাধুলাসহ নানা গৃহস্থালি কাজে এগুলো ব্যবহার করে আসছিলেন। বাড়িগুলো অযত্নে পড়ে থাকলেও এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজরদারি দেখা যায়নি। এ নিয়ে দেশ দর্পণসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল হান্নান জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি প্রকল্পটির সকল স্থাপনা বাস্তবায়ন সম্পন্ন করেছে ছয় মাস আগে। যার হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দায়িত্বে রয়েছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপজেলা টাস্ক ফোর্স। পিআইও বলেন, আমার দায়িত্ব ছিল নির্ধারিত সময়ের ভেতর বাড়িগুলো প্রস্তুত করে দেয়া, সেই অনুযায়ী প্রস্তুত করে দেয়া হয়। তবে একটি বাড়ির বিষয়ে কিছুটা আইনি জটিলতা থাকায় অন্যগুলো বরাদ্দে বিলম্বিত হচ্ছিল বলে শুনেছি।

শুক্রবার তালিকাভুক্ত চার পরিবারকে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের বাড়ি বুঝিয়ে দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বার তাদের হাতে এসব বাড়ির চাবি তুলে দেন। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহিন খসরু, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল হান্নান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাক্কির আহমেদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন বাড়ি প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন- গাড়ি চালক পলাশ হোসেন, হোসেনাবাদ কান্দিরপাড়ার রেহেনা খাতুন, মথুরাপুরের জাহানারা বেগম ও ফারাকপুর ভাঙ্গাপাড়ার বাদল হোসেন। এ ছাড়া যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় ধীর গতির জন্য মথুরাপুর স্পটের আরেকটি বাড়ি হস্তান্তর এখনো আটকে আছে বলে জানা যায়।

নতুন বাড়িতে ওঠার পর গৃহহীন অসহাায় পরিবারগুলো যেন খুশিতে আত্মহারা। জমিসহ বাড়ি উপহার দিয়ে হতাশাগ্রস্ত জীবন যাপন থেকে মুক্ত করে দেয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রাণভরে দোয়া করেছেন বলেও জানান। তাদেরই একজন রেহেনা খাতুন। থাকতেন হোসেনাবাদ কান্দিরপাড়া এলাকায় ছোট একটি ভাড়া বাসায়। অভাবের সংসারে টানাপোড়েনের মাঝে ঠিকমতো দিতে পারতেন না ভাড়ার টাকা। অনেক আগেই তিনি স্বামী হারিয়েছেন। এক ছেলে বড় হয়ে কাজ করেন ঢাকায়। রেহেনা সেলাই মেশিনের কাজ করে চালান নিজের জীবিকা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এক টুকরো জমিসহ বাড়ির মালিক হওয়ায় তিনি এখন মহাখুশি।

আরো পড়ুন:
রাজধানীর বারিধারায় ৬ তলা ভবনে আগুন
ঠাকুরগাঁওয়ে শীতার্তদের মাঝে ৯শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরণ

এদিকে দৌলতপুর উপজেলায় গৃহহীনদের জন্য তৃতীয় ধাপে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আরো ১৮টি বাড়ি নির্মাণ কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের সরিষাডুলি গ্রামে এসব বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮৮টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বিশেষ প্রকল্পে উপজেলা টাস্ক ফোর্সের প্রধান দায়িতপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা হলেন, ইউএনও আব্দুল জব্বার এবং এসিল্যান্ড আফরোজ শাহিন খসরু। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থা নিশ্চিতে রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ এবং উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ। এসব বাড়িতে রয়েছে- দুটি ঘর, একটি রান্নাঘর, টয়লেট, বারান্দা, ছোট্ট উঠান, বিদ্যুৎ ও পানি সুবিধা।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা দৌলতপুর উপজেলা টাস্ক ফোর্সের সদস্য সচিব, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহিন খসরু বলেন, একটি বাড়িতে ভূমি সংক্রান্ত আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছিল। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে অবগত করে সেটি সমাধান করা হয়। তা না হলে আগের স্যারের (বর্তমান এডিসি) সময়েই পরিবারগুলোকে এক সঙ্গে নতুন বাড়িতে তুলে দেয়া হতো। ওই একটি বাড়ির জায়গার মালিকানা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এতদিন অন্যদেরও অপেক্ষা করতে হয়েছে।

জানুয়ারী ২৩.২০২২ at ১৯:১১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরএস/এমএস