যশোরে সিজার করতে গিয়ে প্রসূতীর খাদ্যনালী কেটে ফেললো হাসপাতালের ব্যবস্থাপক : থানায় অভিযোগ

যশোরে স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নাজমা খাতুন (৩০) নামে এক প্রসুতীর সিজার করতে গিয়ে খাদ্যনালী কেটে ফেলেছেন ওই হাসপাতালে ব্যবস্থাপক ডা. মোছা. মাহাফুজা মনির। এমন অবস্থায় ভুক্তভোগী নাজমা খাতুন বর্তমানে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। একই সাথে মায়ের বুকের দুধের অভাবে মৃত্যুপাঞ্জা লড়ছে ১৫ দিন বয়সী নবজাতক।

ভুক্তোভোগী প্রসূতী নাজমা খাতুন মনিরামপুর উপজেলার, সদর বাজার এলাকার ফরিদ আহমেদের স্ত্রী। নাজমা প্রসূতি অবস্থায় শহরের খালদার রোড বরফ কলের পাশে একটি ভাড়া বাসায় তার মা আনোয়ারা বেগমের সাথে থাকতেন।

নাজমা খাতুনের ভাই রনি (৩২) জানায়, তার বোন নাজমা খাতুনের প্রসব যন্ত্রণা উঠলে গত ৭ জানুয়ারি সকাল দশটার দিকে যশোর সদর হাসপাতালের বিপরীত পাশে স্ক্যান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হয়। ভর্তির পরের দিন ৮ জানুয়ারি সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মোছা. মাহাফুজা মনির ও তার সহোযোগিরা নাজমা অবস্থা খারাপ বলে তৎক্ষণাৎ সিজার করাতে চায়।

এসময় আমি ও আমার পরিবারের লোকজন নাজমার অবস্থা খারাপ শুনে সিজার করতে সম্মতি দেই। সিজারের পর নবজাতক বাচ্চা সুস্থ হলেও আমার বোন নাজমা আর সুস্থ হয় না। পরে আমাদের রিলিজ দিয়ে দিলে বাড়িতে নিয়ে যাই। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর অবস্থার অবনতি দেখে আবারও স্ক্যান হাসপাতালে ভর্তি করাই।

চিকিৎসক মাহাফুজা মনির বলেন, ৭-৮ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও দিন দিন আমার বোন নাজমার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে যায়। এ সময় আমাদের চাপে চিকিৎসক মাহাফুজা মনির স্বীকার করে যে সিজার করার সময় তার খাদ্যনালীর নাড়ি কেটে গিয়েছে। এমন ঘটনা শোনার পর আমরা উত্তেজিত হলে আমাদের সকল খরচ বহন করার মৌখিক অঙ্গিকার করে এবং আমাদের সেখান থেকে খুলনায় অনত্রে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলে।

আরো পড়ুন :
কোটচাঁদপুরে জিয়াউর রহমানের ৮৬ তম জন্মবার্ষিকী পালিত
করোনায় আক্রান্ত নার্সিং ইনস্টিটিউটের ৫২ শিক্ষার্থী

নাজমা খাতুনের ভাই রনি আরও বলেন, আমরা ১৭ জানুয়ারি আমার বোন নাজমাকে নিয়ে এ্যাম্বুল্যন্স যোগে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানকার এ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া চিকিৎসক মাহাফুজা মনির দেন। কিন্তু তার সম্পূর্ণ খরচ বহন করার কথা থাকলেও তিনি পরে আর আমাদের ফোন রিসিভ করে না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে বিভিন্ন ভাবে ক্ষয়ক্ষতির ভয়ভীতি দেখান।

অতপর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক আমার বোন নাজমা কে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন আমার বোনের খাদ্যনালীর নাড়ি কেটে গেছে এবং পচন ধরেছে। এমত অবস্থায় জরুরী অপারেশনের জন্য লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আমরা অপারেশন করাতে পারছি না। আমার বোন তো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সেই সাথে ১৫ দিনের বাচ্চাটাও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

এদিকে নাজমা খাতুনের ভাই রনি বাদী হয়ে স্ক্যান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক ডা. মোছা. মাহাফুজা মনির সহ আরও কয়েকজন সহকারীকে অভিযুক্ত করে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমার কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। আমি অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে গেলে স্ক্যান হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক কাজী আশরাফ হাসান বক্তব্য দিতে রাজি হননি। যশোর কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদেরর কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। করলে ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে।

জানুয়ারি ১৯.২০২১ at ২১:৪২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/শজ/রারি