নড়াইলে ডাক্তারের ভুল অপারেশনে মহিলার মৃত্যুর অভিযোগ

নড়াইলে ডাক্তর সুব্রত কুমারের ভুল অপারেশনে ববিতা নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিনিকে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চিকিসক সুব্রত কুমার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনেরা।

মৃত ববিতা খাতুন (৩০) সদর উপজেলা হবখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা এলাকার আতিয়ার সরদারের মেয়ে এবং মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার বড়লিন গ্রামের লায়েব সেখের স্ত্রী। নিহত ববিতা খাতুন ৬ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, গর্ভকালীন নানা জতিলতার কারণে ববিতার মা রেবেকা বেগম চিকিংসার জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে আসার পথে রোগীকে পানি খাওয়ানোর জন্য জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের সামনে অপেক্ষা করছিলেন।

এসময় জনতা ক্লিনিকের কর্মচারি লিপি ও নাদিরা রোগী ববিতাকে ফুসলিয়ে জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক শিপনের কাছে নিয়ে যায়। ক্লিনিকের মালিক শিপন গর্ভবতী ববিতার চিকিংসার কাগজ পত্র দেখে ৭২ ঘন্টার মধ্যে রোগী সুস্থ্য হয়ে যাবে বলে ২২ হাজার টাকা নেয় রোগীর মা রেবেকা বেগমের কাছ থেকে।

১৯ নভেম্বর ২০২১ ববিতা খাতুনের সিজার করে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার। সিজার করার পর ২/৩ দিন ক্লিনিকে রেখে রেবেকা বেগমকে বলেন আপনারা বাড়ি চলে যান তিনদিন পর ক্লিনিকে এসে সেলাই কেটে যাবেন।

বাড়িতে গিয়ে ববিতা খাতুন আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তাঁর পেট ফুলে প্রস্রাব-পায়খানা বন্দ হয়ে জ্বালা যন্ত্রণা করে অসুস্থ্যতা বাড়তে থাকে।

পরে রেবেকা বেগম তার মেয়ে ববিতা কে নিয়ে সদর হাসপাতালে গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিংসক (অব.) ডা. মিনা হুমায়ুন কবিরের কাছে নিয়ে গেলে তিনি কিছু পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষা রিপোর্টে দেখা যায় রোগীর পেটের মধ্যে ২/৩ প্যাকেট রক্ত পুজ জমা হয়ে আছে। এ ব্যাপারে ডাঃ মিনা হুমায়ূন জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক শিপনের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলে ওই রোগী কে পুনরায় ওই ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন।

ওই রোগীকে আবারও অপারেশন করেন সেই ডাক্তার সুব্রত। অপারেশনের সময় ডাক্তার সুব্রত পায়খানা প্রসাবের নাড়ি সহ আরও অনেক গুরুত্বপুর্ন নাড়ি কেটে ফেলেন। ফলে রোগীর অবস্থা ক্রমাবনতি হতে থাকলে কিডনিকের মালিক শিপন রোগী ও তাঁর মাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে সেখানে তাদেরকে রেখে পালিয়ে চলে আসেন বলে অভিযোগ করেন মৃত ববিতার মা।

পরে কিছু ব্যাক্তি তাদেরকে আর্থিক সাহায্য করলে তারা আবার রোগীকে নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখান থেকে আবারও ক্লিনিক মালিক শিপন তাদের যশোর উত্তরা প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে গেলে একদিন পর ১২ জানুয়ারি ২০২২ ববিতার মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন :
পাবনার গোবিন্দায় দু’টি রাস্তা মেরামত কাজের উদ্বোধন করলেন-এমপি প্রিন্স
কাহালুতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৬ তম জন্মবার্ষিকী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

নিহত ববিতার মা রেবেকা বলেন, আমার মেয়েকে ডাক্তার সুব্রত একাধিকবার অপারেশন করেছে। মেয়েকে ডা. সুব্রত ভুল চিকিংসা করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে, আমি এর বিচার চাই। আমি এখন তার চার ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবো কি করবো ?

ববিতার ভাই মহিন সরদার বলেন, ডা. সুব্রত আমার আপু ববিতাকে ভুল চিকিংসা করে মেরে ফেলেছে। এ নিয়ে আমরা যখন ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাবো তখন তার স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি দিয়ে বলে মামলা করলে আমাদের কিছুই করতে পারবে না।

বেশি বুঝে না আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে কিন্তু আমরাও মানহানির মামলা করবো তোমাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকিও দেন।

নড়াইল জনতা ক্লিনিকের মালিক শিপন অভিযোগ করে বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় আমরা প্রথমে অপারেশন করতে রাজি হয়নি। রোগীর স্বজনরা আমাকে এবং ডাক্তারকে অনেক অনুনয়-বিনয় করার পওে ডাক্তার রোগীর অপারেশ করতে রাজি হন।

রোগী সুস্থ্য করার জন্য আমরা খুলনা ও যশোর নিয়ে সাধ্যমত চেষ্টা করছি। রোগীর স্বজনরা সবকিছু জেনে এবং লিখিত দিয়েই অপারেশন করিয়েছে বলেও তার দাবি।

অভিযুক্ত সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার ভুল অপারেশনের অভিযোগ করে বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিলো না। রোগীর স্বজনদের পিড়াপিড়িতে অপারেশন করি।

রোগীর শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে রোগী সুস্থ্য করার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ক্লিনিকে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও গাড়ি নিয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

এক পর্যায়ে ডা. সুব্রত কুমার বলেন, ভাই আপনাদের এই বিষয় টা নিয়ে নিউজ করার দরকার নাই। তিনি একটি খাম বের করে বলেন, ভাই এটা আপনারা রাখেন। এটা আপনাদের মিষ্টি খেতে দিছি। রাখতে রাজি না হলে তিনি বার বার ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।

সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার বলেন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমারের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানুয়ারি ১৯.২০২১ at ১৭:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/শুস/রারি