রাজশাহীতে সাংবাদিক পরিচয়ে ২বছর ধরে শিক্ষার্থীকে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা আদায়: থানায় অভিযোগ

রাজশাহী মহানগরীতে সাংবাদিক পরিচয়ে ২বছর ধরে এক শিক্ষার্থীকে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে মো: অমিনুল ইসলাম আমিন (৪০) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৪ জানুয়ারী) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো: ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট(২১) বাদি হয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ইব্রাহিম মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার রামচন্দ্রপুর কেদুর মোড় এলাকায় মো: আসলাম আলীর ছেলে। সে বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইন্সটিউট-এ সিএমটি বিভাগ, ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। এই বয়সে তিনি মা-বাবা হারিয়ে একা।ইব্রাহিম হোসেন সম্্রাট জানায়, ২০২০ সালে আগস্ট মাস থেকে সাংবাদিক পরিচয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা নিতেন মো: অমিনুল ইসলাম আমিন। মামলা থেকে বাঁচতে কখনো ১ সপ্তাহ, কখনো ১৫দিন আবার কখনো ১মাস পর ১হাজার ও ৫শত টাকা করে দিতাম তাকে। কিন্তু গত ডিসেম্বর ২০২১ আমি জানতে পারি সে একজন মাদকাশক্ত প্রতারক।

সেই জেরেই শুক্রবার (১৪ জানুয়ারী) দুপুর ১টার দিকে আমিন আমার বাড়ির গেইটে তালা লাগিয়ে দেয় আমিন। এ সময় প্রতিবেশীরা বাঁধা দিলে সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। একই সময় তার সহযোগী বোয়ালিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিচয় দিয়ে হুমকি প্রদান করে স্থানীয়দের। ওই সময় প্রতিবেশী লাইলী বেগম নামে এক নারী পুলিশ পরিচয় প্রদানকারীর কাছে আইডি কার্ড দেখতে চাইলে তারা মারমুখি আচারন করে এবং অকাথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর স্থানীয়রা ৯৯৯-এ কল দিলে বোসপাড়া ফাঁড়ীর ইনচার্জ এসআই মো. মোসলেম উদ্দিন ও সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ওই সময় এসআই মো. মোসলেম উদ্দিন সনেটকে ফোন দিয়ে তালাখুলে দিতে বলেন। কিন্তু সনেট সেখানে আর আসেনি। পরে ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে পরামর্শ করে তালা ভেঙ্গে মুক্ত হই আমি।

আরো পড়ুন:
পানিতে পড়ে কৃষক নিখোঁজ
ইটভাটা শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে স্বামী জাহাঙ্গীর আটক

তিনি আরও জানান, আমার বড় মো: আল-মামুন সনেট (৩৫) একজন মাদকাশক্ত ব্যক্তি। মা জিবিত থাকা অবস্থায় সে বিভিন্ন সময় নেশার জন্য মা, এবং আমার কাছে টাকার জন্য চাপসৃষ্টি করতো। টাকা দিতে না পারলে আমাকে ও আমার মা মৃত সামেনা বেগমকে মারধর করতো। সেই কারনে ২০১৮সালে স্থানীয় (রাসিক) ২৪নং ওয়ার্ড কউন্সিলর মো: আরমান আলীর কাছে বিচারের জন্য অবেদন করা হয়। এরপর কাউন্সিলর তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ার জন্য নোটিশ পাঠালে আমার ভাই তার স্ত্রীকে নিয়ে অনত্র বাড়ি ভাড়া করে চলে যায়। এরপর ২০২০ সালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মায়ের মৃত্যু হয়। সেই থেকে বড়ভাই বাড়ি দখলের লক্ষ্যে বার বার মো: অমিনুল ইসলাম আমিন ও তার সহযোগী ৪/৫জনকে পাঠাতে থাকে। তারা নিজেদের পুলিশ আর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০০/১০০০ করে টাকা নিতেন আমার কাছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ির জমির পরিমান হাফ কাঠা (.০০৯৪) আমার মায়ের ক্রয় করা জমি। এই জমির শরিক আমরা দুই ও দুই বোন। এর মধ্যে আমি সবার ছোট হয়ায় আমার দুইবোন ও আমার বাবা আদালতে গিয়ে বাড়িটি আমার নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন। কিন্তু করোনায় মায়ের মৃত্যুর কারনে মায়ের অংশটা লেখাপাড়া হয়নি। তাই মায়ের অংশের ভাগের জন্য স্থানীয় বাসার রোড়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের অফিসে ২লাখ টাকায় বড়ভাইয়ের সাথে ৩শত টাকা মূল্যের ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখা পড়া আপোষ-মিমাংসা করে দেন কাউন্সিলর। সেখানে ১ মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা উল্লেখ করা হয়। ওই দিন রাতেই আমিন আমার বাড়িতে গিয়ে যমুনা ৩২ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন জোর পূর্বক আমার ঘর থেকে নিয়ে যায়। এরপর মিমাংসার ১৫দিন না যেতেই আমিন তার সহযোগীরা আমাকে জানায় মিমাংসা মানিনা। সেই থেকে আজ আবদি গালিগালাজ, হুমকি, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে আমিন ও পুলিশ পরিচয় প্রদানকারী তার এক সহযোগীসহ আরো ৪/৫জন। এ ব্যপারে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় মো: ইব্রাহিম হোসেন সম্্রাট বাদি হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।জানতে চাইলে বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানুয়ারী ১৫.২০২২ at ১৩:০৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মরর/এমএইচ