অভয়নগরে জিপিএ -৫ পেয়েও ভবিষ্যৎ নিয়ে দু:চিন্তায় রুখসানা

রুখসানা খাতুন। জন্মের পর থেকেই দারিদ্রতার সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই করে চলেছে। তবুও লেখাপড়ার হাল ছাড়েনি।যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পেয়েছে। রুকসানার স্বপ্ন ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে গরিব অসহায়দের সেবা করার। রুখসানা খাতুন নওয়াপাড়া পৌরসভার ভাঙ্গাগেট গ্রামের মো. আনিছ শেখ’র মেয়ে ।

জানা যায়, দারিদ্রতাকে উপেক্ষা করে পূর্বাচল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ -৫( গোল্ডেন ) পেয়েছে রুখসানা খাতুন। অভাব থাকলেও পিছু হটেনি লড়াই থেকে। বড় হওয়ার স্বপ্নকে ঘিরেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। নিজের চেষ্টায় যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পেয়েছে। তার ফলাফলে খুশি হয়েছে পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা।

তবে অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে তার। সামনের পুরোটা পথ তার অনিশ্চিত। দারিদ্র্যতার কারণে আগামী দিনের উচ্চশিক্ষার খরচের চিন্তায় বাবা-মা ও তার চোখমুখে হতাশার ছাপ। অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ভাঙ্গাগেট গ্রামে মো. আনিছ শেখ’র মেয়ে রুখসানা খাতুন। তার বাবা একজন ফেরিওয়ালা। বিভিন্ন বাজার ও অনুষ্ঠানে শোন পাপড়ী বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়ে তাদের সংসার কোন রকম চলে। মা রেশমা বেগম গৃহিণী। এক বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রুকসানা বড়। অভাবের কারণে তার পড়ালেখা প্রায় বন্ধের উপক্রম। জমি বলতে বাড়ির ভিটাটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই।

তার বাবা মো. আনিছ শেখ জানান, মেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। সে আরও পড়তে চায়। তাই তারা এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খরচ নিয়ে। স্বল্প আয়ে চলে চার সদস্যের পরিবার। শুধু এটুকু বলতে পারি মেয়ের লেখাপড়া করাতে গিয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, পরীক্ষার ৩ মাস পূর্বে সাইন্সের বিষয়ে প্রাইভেট পড়াতে দিয়েছিলাম কিন্তু সে টাকা আজও পরিশোধ করতে পারিনি। এখন মেয়েকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করে, বই-খাতা, বিজ্ঞানের উপকরণ, প্রাইভেটসহ অন্যান্য খরচ যোগাতে পারবো না। তাই মেয়েকে নওয়াপাড়া মডেল কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তির আবেদন জমা দিয়েছি। এখন যদি কেউ বিজ্ঞান শাখায় পড়ানোর খরচ যোগায় তাহলে মেয়েকে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি করে দেব।

আরো পড়ুন :
থানচি ইতিহাসের বড় শোকাহত পরিবার কেমন আছেন?
বঙ্গবন্ধু সেতুতে পরিবহন দুর্ঘটনায় দীর্ঘ যানজট

লেখাপড়ার বিষয়ে রুকসানা বলেন, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পড়ালেখা করেছি। আবার কখনও কখনও বাবার কাজে সহযোগিতা করেছি। এসএসসি পরীক্ষার মতো স্কুল জীবনের সব পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছি। রুখসানা বলেন,ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে গরিব অসহায়দের সেবা করতে চায় সে । তবে সে একটু আর্থিক সহযোগিতা পেলে পূরণ হবে রুকসানার স্বপ্ন।

পূর্বাচল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধনঞ্জয় কুমার বিশ্বাস বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে রুকসানাকে সম্পূর্ণ ফ্রি পড়িয়েছি। শুধুমাত্র বোর্ড ফি নিয়ে তাকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। বর্তমান অর্থের অভাবে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করা তার জন্য বড়ই কষ্টের হয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, সমাজের শিক্ষানুরাগী কোনো সুহৃদয় ব্যক্তির একটু সহযোগিতা পেলে তার উচ্চশিক্ষার পথ নিশ্চিত হতে পারে। তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নং ০১৯১৩৫১৪৫১৬।

জানুয়ারি ১৪.২০২১ at ১৮:২৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জাহোহৃ/রারি