আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

নড়াইলে আধুনিক জিনিসপত্রের ভিড়ে মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকট এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানান মৃৎশিল্পীরা। হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা কমতে থাকায় প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।

নড়াইলে শীতের মৌসুমে যে ব্যস্ততা দেখা যেতো মৃৎশিল্পীদের। সেই আগের মতো এখন আর ব্যস্ততা নেই। সারি সারি মাটির তৈজসপত্র এখন তেমন নজরে পড়ে না। মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা আগের মত না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র। তাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়ার পথে ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা কয়েকটি পরিবার এখন বাপ-দাদার এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। কেউ দুধের পাতিল তৈরি করছেন। কেউ হাঁড়ি পাতিল পোড়ানোর চুলায় কাজ করছেন। আর দধির পাতিল রোদে শুকানো হচ্ছে। নারী ও পুরুষ উভয়ে কাজ করেন। আগের মতো সে ব্যস্ততা আর নেই। মৃৎশিল্পীরা কয়েকটি পরিবার এখন বাপ-দাদার এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন।

আরো পড়ুন:
রাজধানীতে ছুরিকাঘাতে যুবক আহত
বেড়ায় শীতের তীব্রতায় ভীড় বাড়ছে পুরাতন কাপড়ের দোকানে

মৃৎশিল্পী হরিপাল বলেন, মাটির তৈজসপত্র বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র বের হওয়ায় মাটির তৈজসপত্র আর চলে না। মাটির তৈজসপত্র আগে ভালোই চলতো। সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজ করতাম। সারাদিন কাজ করতাম, হাট-বাজারে যেতাম দুই-চার হাজার টাকা বিক্রি করতাম। এখন আর আগের মতো বেচা কিনা নেই। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র হয়ে মাটির প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দধির পাতিল আর টয়লেটের পাট এখন একটু চলে। দধির পাতিল ও টয়লেটের পাট যদি বন্ধ হয় আমরা কেমনে চলবো। আমাদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের হাঁড়ি পাতিল আর চলে না। ছোট বেলায় বাপ দাদার সাথে কাজ করছি। তখন মাটির জিনিস খুব ব্যবহার হতো। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিস বের হয়েছে এখন মাটির জিনিস চলে না। এই কাজের সাথে যারা আমরা আছি আমাদের চলা খুবই কষ্ট।

মৃৎশিল্পী রাজা বলেন, আধুনিক জিনিস বের হয়েছে। যার ফলে মাটির জিনিস কেউ আর ব্যবহার করতে চায় না। অল্প সংখ্যক পরিবার এখন মৃৎশিল্প টিকিয়ে রেখেছে। মৃৎশিল্পীদের ছেলেরা বিভিন্ন কাজ করছে। উল্লেখ্য, মৃৎশিল্পীরা শুধুমাত্র নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে শুকনা খড়, লাকড়ি, মাটি, বালি ও পানির সাহায্যে তৈরি করতেন দধির পাত্র, পিঠাখোলা, ভাতের পাতিল, পাতিলের ঢাকনা, তরকারির কড়াই, রসের হাড়ি, ধুপ জ্বালানি পাত্র, মুড়ির পাতিল, বাতি জ্বালানি পাত্র, জলকান্দা, শিশুদের জন্য বিভিন্ন রকমের মাটির তৈরি খেলনা। এত হতাশার মধ্যেও বৃদ্ধ মৃৎশিল্পী কার্তিক পাল স্বপ্ন দেখেন কোনো একদিন হয়তো আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সারাদেশে আবারও ফিরে আসবে মৃৎশিল্পের সুদিন। সেই সুদিন ফিরিয়ে আনতে এবং মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এর বাজার সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার কথাও বললেন তিনি। সবশেষ বললেন, ‘যতদিন বাঁচবো এ মাটিকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চাই।

জানুয়ারি ০৪.২০২২ at ১৬:২৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/উর/মক