১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেখ হাসিনা ধরলা সেতুতে বন্ধ লাইটিং, দুর্ভোগ চরমে

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে উপজেলার দ্বিতীয় শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এটি ১৯৬ কোটি ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়। সেতুটি নির্মাণে ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল চুক্তি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন। ২৬ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পরে দুই দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতুটি ৯৫০ মিটার দীর্ঘ ও ৩২ ফুট প্রস্থ।

আরো পড়ুন:
বগুড়া কাহালুতে ট্রাক – অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১ জনের মৃত্যু ৪ জন গুরুত্বর আহত
৪ পথ দুর্ঘটনামুক্ত রাখতে সেভ দ্য রোড-এর ৭ দফা দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি

২০১৮ সালের ৩ জুন দ্বিতীয় শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের কিছু দিন যেতে না যেতেই অর্ধেক বাতি বন্ধ হয়ে পড়ে। এনিয়ে সমকালসহ বিভিন্নি পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়। পরে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ৮০ হাজার টাকায় ব্যয় করে বাতিগুলো সংস্কার করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ । সংস্কার করার পরেও গত ৪ মাস ধরে বন্ধ বন্ধ হয়ে পড়ে ওই ঝুলন্ত বাতিগুলো। আবার অনেক স্টিলের পিলারে ঘুরে গেছে ধরলার পানির দিকে। ঠিক করা হয়নি সে গুলো। এমন অবস্থায় রয়েছে উত্তর ধরলা স্বপ্ন এ সেতুটি। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সেতুর সুন্দর্য ।

রাতে অন্ধ্যাকার শেখ হাসিনা কুলাঘাট ধরলা সেতু। ফলে আবারো বন্ধ হওয়ার পথে বাতি গুলো। সারিবদ্ধ ২০টি পিলারের বাতির মধ্যে মিটমিট করে জ্বলছে মাত্র ৫টি বাতি। তাও একটার পর একটা আলো দিচ্ছে সেতুর ওপর। প্রায় এক কিলোমিটার সেতুর ওপর দাড়িয়ে থাকা বাতি গুলো ৪ মাস ধরে বন্ধ থাকায় অন্ধ্যাকার হয়ে পড়ে সেতুটি। সন্ধ্যা হলে চরম দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। তবে সংশ্নিষ্ট প্রশাসন জানিয়েছেন সেতুর এ্যাপ্রোস সংযোগ সড়কের আইডি নম্বর না থাকায় অকেজো বাতিগুলো মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না । তবে এ্যাপ্রোস সংযোগ সড়কটি উপজেলা সড়কে অন্তরভূক্ত করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে । সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নিবেন তারা। এদিকে সেতুটি খুলে দেয়ার পর থেকে বিনোদনের স্থান করে নিয়েছেন দর্শনার্থীরা। বিকাল হলে বিপুল সংখ্যক নারী পুরুষ ভীড় জমাতো ওই সেতুর ওপর। এখন সেতুর বাতি গুলো বন্ধ থাকায় আগেরমত আসছে না তারা।

অথচ সেতু বিদ্যুতায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ লাখ ৪ হাজার ২১০ টাকা। সেতুর পশ্চিম পাশে ৩০ ফুট চওড়া ২১টি ও পূর্ব পাশে ২০টি স্টিলের পিলারে ৫টি মিটমিট করে জ্বলছে। নিম্নমানের তার লাগানোয় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক কিলোমিটার সেতুর ওপর পর্যাপ্ত আলো না থাকায় কষ্ট করে পারাপার হতে হচ্ছে যানবাহনসহ সাধারন মানুষদের। পযার্প্ত আলো না থাকায় রাতে অন্ধ্যকারে দুর্বৃত্তদের আনাগোনা বাড়ছে সেতুর ওপর । ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে প্রায় সময়।

সেতুর পাশে ফুচকা, চানাচুর ও মুড়ি ব্যবসায়ী মোবারক আলী ও রফিকুল ইসলাম বলেন, সেতু খুলে দেয়ার পর থেকে বিভিন্ন জায়গার মানুষ আসতো ব্রীজে। তারা গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ঘোরাফেরা করতেন সেতুর ওপর । বেচা কিনাও বেশি হতো আমাদের। এখন ব্রীজে আলো নাই, তাই লোকজন তেমন আসে না এখন । দোকানের আলোয় সেতুটিতে একটু আলো থাকে। আমরা দোকান বন্ধ করলে সেতুর ওপর আর আলো থাকে না ।

ফুলবাড়ীর সৌমিক ক্লথ ষ্টোর মালিক পরিমল ও সাদিক ইলেকট্রনিক্সের মালিক মাইদুল ইসলাম জানান গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত লালমনিহাট থেকে মালামাল নিয়ে এসে দেয়া হয়। এখন সেতুতে বাতি না থাকায় ভয়ে মালামাল নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না । অথচ এক কিলোমিটার সেতুর ওপর দুই একটি বাতি কোন রকমে জ্বলছে। এ নিয়ে অনেক বার প্রশাসনকে অবগত করেছি । কিন্তু বাতি গুলোর কোন সংস্কারের ব্যবস্থা হচ্ছে না।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী জুলফিকার আলী জুয়েল জানান , সেতুটি নির্মান করা হলেও সংযোগ এ্যাপ্রোস সড়কের আইডি নম্বর ছিল না । যার কারনে নতুন করে আইডি নম্বরের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে । এখন উপজেলা সড়কে রাস্তাটি যুক্ত হলে চলতি অর্থ বছরে রক্ষানা বেক্ষন করা সম্ভব হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী আসিব ইকবাল রাজীব জানান, ভোল্টেজের কারণে কিছু বাতি জ্বলছে না। পরে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করে বাতিগুলো সংস্কার হয়। এখন বাতি গুলোর মেরামতের বরাদ্দ নেই । বরাদ্দ আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম জেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জানান বিষয়টি আমার জানা নেই । তবে খোঁজ খবর নিয়ে বাতি জ্বলার দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানুয়ারী ০২.২০২২ at ১৬:৪৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বমব/মক