ওমিক্রন-ডেল্টার দাপটে উদ্বেগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

করোনা ভাইরাসের দুই ধরন ওমিক্রন আর ডেল্টা বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের যে ‘সুনামি’ বইয়ে দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি বলেছেন, এই বিপুল সংক্রমণ ভয়ংকর চাপ সৃষ্টি করছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দশা তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপজুড়ে একদিনে রেকর্ড নতুন রোগী শনাক্তের খবরের মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুসের এই শঙ্কিত ভাষ্য এলো।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৪২৭ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এ যাবৎকালের রেকর্ড। ডেনমার্ক, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য আর অস্ট্রেলিয়াতেও বুধবারের শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। পোল্যান্ডে একদিনেই মৃত্যু ঘটেছে ৭৯৪ জন কোভিড রোগীর। সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ে সেখানে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। বুধবার দেশটিতে যারা মারা গেছেন, তাদের তিন-চতুর্থাংশই কোভিড টিকার বাইরে ছিলেন।

মাত্র এক মাস সময়ের মধ্যে বিশ্বের বহু দেশে প্রাধান্য বিস্তার করা করোনা ভাইরাসের ওমিক্রন ধরনটি আগের ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার চেয়ে কম গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি তৈরি করে বলে প্রাথমিক গবেষণায় তথ্য এসেছে। কিন্তু দুই ডোজ টিকা এ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারছে না বলে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বিদ্যুৎগতিতে, যা দিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক অবশ্য কেবল ওমিক্রনের কথা বলছেন না। সঙ্গে ডেল্টাকে যুক্ত করে তিনি একে বলছেন ‘জোড়া হুমকি’। রয়টার্সের হিসাব বলছে, এখন প্রতিদিন বিশ্বে গড়ে নয় লাখ নতুন কোভিড রোগী শনাক্তের খবর আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি সিএনএনকে বলেন, তার দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে টিকাদান যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে জানুয়ারির শেষ নাগাদ ওমিক্রনের সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে তিনি মনে করছেন। কিছু দেশ, বিশেষ করে যারা ধনী, তাদের নাগরিকদের কোভিড টিকার তৃতীয় ডোজ দিচ্ছে বুস্টার হিসেবে। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে তাদের ১২ বছরের বেশি বয়সি নাগরিকদের ৫৭ শতাংশকে তৃতীয় ডোজ দিয়ে ফেলেছে। ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস অবশ্য মনে করেন, ধনী দেশগুলোর বড় পরিসরে এই বুস্টার ডোজ কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত মহামারিকে দীর্ঘায়িতই করবে। কারণ তাদের তৃতীয় ডোজ জোগাতে গিয়ে গরিব দেশগুলো টিকাবঞ্চিত থেকে যাবে, যেখানে টিকাদানের হার এমনিতেই কম।

ফলে সেসব দেশে আরো বেশি ছড়ানোর এবং নতুন নতুন মিউট্যান্ট তৈরি করার সুযোগ পাবে ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ৯২টিই ২০২১ সালের মধ্যে তাদের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশকে কোভিড টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে আগামী জুলাই মাসের আগেই জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে নতুন বছরের শুরুতে নতুন করে অঙ্গীকার নেয়ার আহ্বান জানান ড. তেদ্রোস।