জানুয়ারিতে ফেরত পাবে ই-কমার্সে আটকে থাকা টাকা

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে ঘরে বসে পণ্য পেতে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সবচেয়ে সমালোচিত খাতে পরিণত হয়। ঘরে বসে পণ্য পাওয়ার পাশাপাশি সব লোভনীয় অফারে অনেকে লাখ লাখ টাকা লগ্নি করেন ই-কমার্সে। প্রতারণার ফাঁদ পাতা ইভ্যালি সরকারের বেড়াজালে আটকে পড়ার পর উন্মোচন হয় কিউকম, ধামাকা, ই-অরেঞ্জসহ আরও কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মুখোশ। গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আটকে যায় পেমেন্ট গেটওয়েতে। দিশেহারা হয়ে আন্দোলনে নেমেও খুব সুবিধা করতে পারেননি গ্রাহকরা।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মধ্যে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা ২১৪ কোটি টাকা ফেরতের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মামলার বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানের গেটওয়েতে আটকা টাকা জানুয়ারি থেকে ফেরত পাবে গ্রাহক।

জানা যায়, গত ১৫ ডিসেম্বর এসক্রো সার্ভিসে আটকে থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করতে পেমেন্ট গেটওয়েগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় জটিলতায় পড়তে হয়। তাই এই অর্থ ছাড়ের জন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সব মামলার তথ্য সাতদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জানাতে পুলিশ সদর দফতরকে গত সপ্তাহে চিঠি দেওয়া হয়। এসব তথ্য পেলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে গ্রাহকের টাকা দেওয়া শুরু হবে। সবচেয়ে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিষয়টি হাইকোর্টের গঠিত কমিটি দেখভাল করছে। সাবেক বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে কাজ করছে কমিটি। ইভ্যালির বিষয়টি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে সেটি নিয়ে সেই কমিটি তাদের অবজারভেশন দেবে।

আরো পড়ুন:
ক্যানসারে আক্রান্ত রাবি শিক্ষক ফারুক হোসাইন আর নেই
নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ড্রাফট শেষে যেমন হলো বিপিএলের ছয় দল

অনলাইনেই টাকা ফেরত পাবেন গ্রাহক
ই-কমার্সে গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগের মুখে চালু এসক্রো সিস্টেমে আটকা পড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকা ফেরত শুরু হলে যে প্রক্রিয়ায় গ্রাহক টাকা দিয়েছেন সেই প্রক্রিয়ায় টাকা ফেরত পাবেন। এর আগে ইভ্যালিসহ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দেওয়া চেক বাউন্স করায় অনেক গ্রাহকেরই এটি নিয়ে সংশয় রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের কর্মকর্তারা জানান, যেহেতু গ্রাহক অনলাইনে পেমেন্ট করেছে আমরা টাকা রিলিজ শুরু করলে অনলাইনেই তাদের টাকা ফেরত দেবো। তারা যে সিস্টেমে পেমেন্ট করেছে সেই সিস্টেমে ফেরত পাবে। এক্ষেত্রে অতীতের মতো চেক বাউন্স বা অন্য কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।

ই-কমার্সকে যেভাবে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা
বছরজুড়ে নানান সমালোচনার মুখে থাকা কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা অনেক গ্রাহক। এমন পরিস্থিতিতে ই-কমার্সকে কীভাবে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায় সেটি নিয়ে পরিকল্পনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যাতে এ খাত সমৃদ্ধ হতে পারে সেদিকে নজর রাখছেন সংশ্লিষ্টরা।

কর্মকর্তারা বলছেন, ই-কমার্স নিয়ে অনেক হইচই হয়েছে, অনেক ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চায় ই-কমার্স সামনের দিকে এগিয়ে যাক। ই-কমার্সকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। ই-কমার্সকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রচলিত যে আইন আছে- ভোক্তা অধিকার আইন, প্রতিযোগিতা আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন মিলিয়ে নতুন আইন করা হবে অথবা সেসব আইনের মধ্যে কিছু ধারা যুক্ত করা হবে। ই-কমার্সের কোনো কর্তৃপক্ষ ছিল না, সেজন্য ডিজিটাল কমার্স সেল নিয়ে কাজ চলছে।

এ বিষয়ে এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ই-কমার্সের ব্যবসার জন্য সবাইকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসতে হবে, সেটার কাজ শেষ দিকে। আমরা টেকনিক্যালি এটার টেস্ট রান করছি। সেখানে আমাদের সাইবার সিকিউরিটির ইস্যু আছে। সেটাকে কীভাবে আমরা প্রোটেক্ট করতে পারি তা নিয়ে এটুআই কাজ করছে। শিগগির আমরা এটি উদ্বোধন করবো। শুরুতে আমাদের কাছে প্রচুর আবেদন পড়বে, সেজন্য কোম্পানিগুলো রেজিস্ট্রেশনের কাজ করা আরজেএসসির হাতে ই-কমার্স রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটা হয়তো দেবো। কিন্তু ওভারঅল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডিজিটাল কমার্স সেল এটা মনিটরিং করবে।

ডিসেম্বর ২৭.২০২১ at ১৮:২৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জানি/জআ