দৌলতপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় নষ্ট হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অযত্নে পড়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। নির্মাণের ৬ মাসেও সম্পূর্ণ প্রস্তুত এই ঘরবাড়ি এখনো বরাদ্দই পায়নি গৃহহীন পরিবারগুলো। যেখানে আশ্রয় হবে চারটি গৃহহীন অসহায় পরিবারের। দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রস্তুত হয়েছে ৮৮টি বাড়ি। এর মধ্যে বরাদ্দ পেয়েছে ৮৪টি গৃহহীন পরিবার। বাকি চারটি বাড়ি গৃহহীনদের হাতে তুলে না দেয়ায় সেগুলো এখন নষ্ট হতে বসেছে। এ কারণে বাড়ছে বরাদ্দ না পাওয়া পরিবারগুলোর ক্ষোভ।

অযত্ন আর অবেহলায় পড়ে থাকা প্রধানমন্ত্রীর এসব ঘর ইতোমধ্যে অপব্যবহারের অভিযোগ উঠলেও এ বিষয়ে উপযুক্ত জবাব দিতে পারেননি প্রকল্পটির উপজেলা টাস্ক ফোর্সের কর্মকর্তারা। চলতি বছর জুলাইয়ের প্রথমদিকে প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে চার পরিবারের বসবাসের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির তত্ত্বাবধানে উপজেলার মথুরাপুর বড় বাজার সংলগ্ন দর্গাতলা গ্রামে নির্মাণ করা হয় চার গৃহহীন পরিবারের এই আশ্রয়স্থল। এই বাড়ি প্রাপ্তির জন্য তালিকাভুক্ত পরিবারগুলো এখন সেখানে বসবাসের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে এখনো তাদের মাঝে বাড়িগুলো হস্তান্তর করা হয়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল হান্নান জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি প্রকল্পটির সকল স্থাপনা বাস্তবায়ন সম্পন্ন করেছে প্রায় ছয় মাস আগে। এটির হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দায়িত্বে রয়েছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপজেলা টাস্ক ফোর্স। পিআইও বলেন, আমার দায়িত্ব ছিল নির্ধারিত সময়ের ভেতর বাড়িগুলো প্রস্তুত করে দেয়া, সেই অনুযায়ী প্রস্তুত করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের দায়িত্ব আমার নয়। ঠিক কী কারণে বরাদ্দ দিতে বিলম্বিত হচ্ছে তাও বলতে পারছি না।

এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উপজেলা টাস্ক ফোর্সের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা হলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল জব্বার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহিন খসরু। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থা নিশ্চিতে রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ এবং উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ। এসব বাড়িতে রয়েছে, রান্নাঘর, টয়লেট, বারান্দা, ছোট্ট উঠান, বিদ্যুৎ ও পানি সুবিধা।

আরো পড়ুন:
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড, পরিদর্শন শেষে যা বললেন সাবেক নৌমন্ত্রী
রহস্যের উত্তর মিলল অবশেষে : ডিম আগে না মুরগি?

সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী জানান, অব্যবহৃত পড়ে থাকায় সরকারি এই সম্পদ দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অসৎ উদ্দেশ্যেও এগুলো অনায়াসে যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে। মাসের পর মাস পড়ে থাকায় দরজা-জানালা ও দেয়ালের ক্ষতি হচ্ছে। ওই এলাকার বাসিন্দা দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাক্কির আহমেদ জানান, গৃহহীনদের জন্য তৈরি করা বাড়ি চারটি এখনো কাউকে বরাদ্দ দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই ভালো জানেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ওই চার বাড়ির তিনটি তালাবদ্ধ। একটির রান্না ঘরের দরজা খোলা, কয়েকটি ঘরের জানালা খোলা। অলস পড়ে থাকায় প্রতিবেশী লোকজন খড়ি শুকানো, কাপড় শুকানো, শিশু-কিশোরদের খেলাধুলাসহ নানা গৃহস্থালি কাজে এগুলো ব্যবহার করছেন। কিন্তু এ বিষয়েও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজরদারি দেখা যায়নি।

প্রস্তুত বাড়ি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা দৌলতপুর উপজেলা টাস্ক ফোর্সের সদস্য সচিব, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহিন খসরু দাবি করেন, ওই চারটি বাড়ির ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা ছিল। সেটি সমাধান হয়ে এসেছে। আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এসিল্যান্ড আফরোজ শাহিন খসরু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আর দেরি করবো না, যে বাধা ছিল সেই বাধা কেটে গেছে।

এদিকে দৌলতপুর উপজেলায় হস্তান্তর না হয়ে পড়ে থাকা এসব ঘর সংক্রান্ত কোনো ভূমি জটিলতার বিষয় নেই বলেও জানান পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। অন্যদিকে এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মির্জা কে ই তুহিনকে অবগত করা হয়নি। টাস্ক ফোর্সের নির্দেশ পেলে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ডিজিএম।

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের নতুন বাড়িতে আশ্রয় নিতে অপেক্ষায় রয়েছে চার গৃহহীন পরিবার। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় তারা বাড়িগুলো এখনো বুঝে না পাওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রশাসন বলছে, খুব দ্রুতই তাদের বাড়ি প্রাপ্তির বিষয়টি সুরাহার ব্যবস্থা করা হবে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল জব্বার বলেন, আমি নতুন যোগ দিয়েছি। এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এই মুহূর্তে তেমন কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। আগে জেনে নেই, তারপরে এ বিষয়ে কথা বলবো। ইউএনও বলেন, বিজয় দিবস নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সেই ব্যস্ততা কেটে গেছে। আমরা খুব শিগগিরই বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব।

সারাদেশে দেড় লাখের বেশি পরিবার ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়েছেন। কিন্তু এ উপজেলায় গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় লোকজন বিস্ময় প্রকাশ করেন। অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট না করে দেশব্যাপী সমাদৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপহার দ্রুত হস্তান্তর করে বসবাস উপযোগী রাখার প্রত্যাশা করছেন উপজেলার সচেতন মানুষজন।

ডিসেম্বর ২৫.২০২১ at ২০:০৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এআস/জআ