বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সময়ে ৫৫ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলারের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ঐ সময়ে এসব পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির মাইলফলক অর্জন করে। সে ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে আয় আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

আরো পড়ুন:
পাঁচবিবিতে বিদ্রোহী ২ আওয়ামী লীগ নেতাকে বহিষ্কারের সুপারিশ
পাঁচবিবিতে ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা ব্যহত হওয়ার আশংকা

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৫৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের কৃষিজাত ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে শুকনো খাবার। চলতি অর্থবছরে পাঁচ মাসে ৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের শুকনো খাবার রপ্তানি হয়েছে। স্হানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৭৮০ কোটি টাকা। অবশ্য আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শুকনো খাবার রপ্তানি কমেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের ১৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। আর আলোচ্য সময়ে তামাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৮২ লাখ ডলারের। আর চা রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ ডলার। অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৬ কোটি ডলারের। যা আগের বছরের চেয়ে ৭৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে ১০২ কোটি ৮১ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্িত ঘোষ বলেন, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ পণ্য রপ্তানিতে কর রেয়াত ও ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে গত চার বছর ধরে এ খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে। তিনি মনে করেন এ খাতের উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা বিবেচনায় রেখে নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে, যার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

দেশের রপ্তানি পণ্যের বাজার বাড়াতে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) কাজ করছে। অন্য পণ্যের চেয়ে কৃষিপণ্য তুলনামূলকভাবে বেশি পচনশীল। এজন্য এসব পণ্য দূরদূরান্েত পাঠানোর জন্য ব্যবস্হাপনা এখনো ভালোভাবে গড়ে উঠেনি। কীভাবে পণ্য পাঠানোসহ অন্যান্য ব্যবস্হাপনা করা যায়, নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার জন্য করণীয়, পণ্যের প্যাকেজিং, অন্য দেশে যাতে পণ্য স্কানিং না করা লাগে সেজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি বা উদ্ভাবন, পণ্য পরিবহনের ভাড়া কমানোর উপায় প্রভৃতি নিয়ে এখনো আমাদের দেশে সেভাবে কোনো গবেষণা নেই। পরীক্ষাগারও গড়ে উঠেনি। ফলে কৃষিপণ্য রপ্তানির যে সম্ভাবনা তা বাস্তবায়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি করতে এসব কাজ করা জরুরি।

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, লন্ডন, কানাডা, দুবাই, ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ৫০টিরও বেশি দেশে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। মূলত, বাংলাদেশিরাই এসব পণ্যের ভোক্তা। তারা যেসব জায়গায় বেশি থাকে সেসব দেশেই আমাদের দেশ থেকে বেশি কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশিদের বাইরেও বিদেশিদের এসব আমাদের দেশের পণ্যের ভোক্তা করা গেলে তা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।

দেশের প্রধান কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে চা, সবজি, ফুল, ফল, মসলা, শুকনো খাবার ইত্যাদি। আলু, ধনিয়া পাতা, লাউপাতা, লাউ শাক, বরবটি, কাঁকরোল, করলা, ঝিঙে, লালশাক, বেগুন, টম্যাটো, পটোল, কচু, মিষ্টিকুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, পেঁপে, কলা, শসা, শিম, বাঁধা কপি, মরিচ, মুলাসহ অর্ধশতাধিক সবজি দেশ থেকে রপ্তানি হয়।

ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১০ কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার। আর গত পাঁচ মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি।

ডিসেম্বর ২১.২০২১ at ১২:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ইফ/মক