চৌগাছায় কোটি টাকা নিয়ে দুটি ভূয়া এনজিও উধাও!

যশোরের চৌগাছায় “১০ বছরে দ্বিগুন” টাকার লোভ দেখিয়ে গ্রামবাসির কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে দুটি ভূয়া এনজিও। প্রথমে পিডো পরে আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থার নামে উপজেলার ২টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে ওই দুটি এনজিও।

উপজেলার ৬নং জগদিশপুর ইউনিয়নের মাড়ুয়া, আড়পাড়া, কান্দি, ২ নং ফুলসারা ইউনিয়নরে সৈয়দপুর, কোটালিপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে সঞ্চয় ও ডিপিএস-এর নামে “১০ বছরে দ্বিগুন” টাকার লোভ দেখিয়ে এই টাকা সংগ্রহ করে এনজিও দুটি। রবিবার তাদের পালিয়ে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে জগদিশপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষজন চৌগাছা প্রেসক্লাবের সহযোগিতা কামনা করেন। সেদিন তারা ওই সংস্থা দুটির ডিপিএস ও সঞ্চয় জমাদানের বই দেখিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন।

রবি ও সোমবার দুদিন অভিযোগ তদন্তে জানা যায় “পিডো” বা “আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা” নামে সরকার অনুমোদিত কোনো সংস্থার অস্তিত্ব নেই। অনুমোদন ছাড়াই তারা চৌগাছার এ অঞ্চলে মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এমনকি যশোর সদরের রূপদিয়া বা সমবায় মার্কেটেও এই সংস্থার কোনো অফিস খুজে পাওয়া যায়নি। তবে পিডো’র পক্ষে ওই অঞ্চলের প্রথম মাঠ কর্মী পারভিনা বললেন. “পিডো’র সরকারি অনুমোদন ছিল। আমি রূপদিয়াতে ওই সংস্থার ৫দিনের ট্রেনিং নিয়েছি। তবে পরে অফিসটি ভেঙ্গগেছে।”

আরো পড়ুন:
হাসিমুখে জনসাধারণকে সেবা দিন- কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার
চৌগাছায় তিনশতাধিক ব্যক্তিকে কম্বল দিল জামায়াত

তদন্তে আরো জানা যায়, ২০১৯ সালে পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা পিডো-(চঊউঙ) উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সেসময় ফুলসারা ইউনিয়নের সলুয়া বাজারেও তাদের অফিস ছিল। পরে তারা আড়পাড়া বাজারে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। বছর পার নাহতেই সেই নাম পরিবর্তন হয়ে “আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা” নামে অফিসটির নাম পরিবর্তন হয়ে যায়। সংস্থা দুটি প্রায় ৩বছর তাদের সঞ্চয় ও ডিপিএস কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। অফিসের সাইনবোর্ড এবং স্থানীয়দের সংগ্রহে থাকা সংস্থা দুটির অর্থ সংগ্রহের রশিদ ও টাকা জমা নেওয়ার বইতে পিডো’র ঠিকানা যশোর, রূপদিয়া,সদর যশোর এবং স্থাপিত ১৯৯৮ ইং লেখা আছে। এবং আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থার সাইনবোর্ডে অফিসের ঠিকানা যশোর সমবায় মার্কেট এবং নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নাসিমা খাতুন তিথি’র নাম লিখা আছে। সংস্থা দুটি প্রায় ৩বছর সঞ্চয় ও ডিপিএস কার্যক্রমের নামে সাধারন মানুষজনের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা গ্রহন করেছে। আড়পাড়া ওই সংস্থার অফিসের ঘর মালিক বাবলুর রহমান বলেন শুধু গ্রাহকদের টাকা না আমারও ৭ মাসের ঘর ভাড়া না দিয়ে পালিয়েছে তারা।

তিনি আরো জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে পিডো’র পক্ষে পাশের গ্রামের পারভিনা নামে একজন প্রথম ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। পরে তারাই নাম পরিবর্তন করে আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ওই অফিসে একই কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এ বিষয়ে পিডোর সেই মাঠ কর্মী কান্দি গ্রামের পারভিনা জানিয়েছেন, দেড় বছর আগে পিডো-( চঊউঙ) (পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা) ছেড়ে চলে এসেছি। তখন পিডোর নির্বাহী পরিচালক ছিলেন যশোর রূপদিয়ার মাসুদ চৌধূরি নামে এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে সেই মাসুদ চৌধূরী গ্রাহকদের টাকা পয়সা মেরে ভারতে পালিয়ে যান।

ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পারভিনা এবং খাদিজা চলে যাওয়ার পরে পারভিনার চাচাত ভাই আড়কান্দি গ্রামের কাশেমের ছেলে সোহাগ এবং কালিগঞ্জ থানার গরীনাথপুরের স্বপ্নারানী সংস্থার টাকা সংগ্রহ করতেন। সোহাগ জানান যশোরের আবু সাঈদ নামে একজন “আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা”র এমডি। এবং তার স্ত্রী নাসিমা খাতুন তিথি নির্বাহী পরিচালক। তবে পরে জেনেছি তাদের সরকারি কোনো অনুমোদন নেই এবং যশোরের কোথাও তাদের কোনো অফিস নেই।

এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা সমাজ কল্যান কর্মকর্তা মেহেদি হাসান জানান, আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা নামে কোনো সংস্থার নাম আমাদের তালিকায় নেই। ৬নং জগদিশপুর ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ওই গ্রামের পারভিনার বাবা এসেছিল। আমি তাকে অফিস খুলে ভূক্তভোগিদের টাকা ফিরিয়ে দিতে বলেছি ।

ডিসেম্বর ২০.২০২১ at ২০:৩৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/অফ/জআ