ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন জামাই-শাশুড়িসহ ৫জন

আগামী ২৬ ডিসেম্বর যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ইউপি নির্বাচন। চতুর্থ ধাপের এই নির্বাচনে অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীদের লড়াইকে ছাপিয়ে ভোটারদের মুখে জামাই-শাশুড়ির চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ সাড়া ফেলেছে।

এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান প্রভাষক মফিজ উদ্দিনসহ ৫ জন ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান এসএম সিরাজুল ইসলাম মান্নু, সুরোভী ইসলাম, এম ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ও মাওলানা মো. মশিউর রহমান রয়েছেন।

এই ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে এসএম সিরাজুল ইসলাম মান্নু ও সুরোভী ইসলাম সম্পর্কে তারা জামাই-শাশুড়ি।নির্বাচনে প্রভাষক মফিজ উদ্দিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী, তার প্রতীক নৌকা, এসএম সিরাজুল ইসলাম মান্নু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন, তার প্রতীক ঘোড়া, সুরোভী ইসলামের প্রতীক মোটরসাইকেল, এম ফরিদুল ইসলাম ফরিদ জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রতীক লাঙল এবং জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মাওলানা মো. মশিউর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

আরো পড়ুন:
আত্রাইয়ে আ’লীগের ৯ বিদ্রোহী প্রার্থী বহিষ্কার
শৈলকুপায় নৌকাকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসএম সিরাজুল ইসলাম মান্নু বিএনপির প্রেমবাগ ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং তার চাচি শাশুড়ি সুরোভী ইসলাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার সহধর্মিনী।

প্রেমবাগ ইউনিয়নে মোট ১৭ হাজার ৮৯৯ ভোটার। যার মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৮ এবং নারী ভোটার ৮ হাজার ৮৯১জন।

আলাপচারিতায় নতুন প্রার্থী সুরোভী ইসলাম ইসলাম বলেন, ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইনে নারী ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া পাচ্ছি। তারা আমাকে নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে যেতে উদ্ভুদ্ধ করছেন। সাধারণ ভোটারদের মাঝে থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি।

কেননা আমিই প্রথম নারী যে এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছি।
জামাইয়ের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন, ভোটাররা কীভাবে দেখছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মান্নু আমার ভাশুর কন্যার জামাই অর্থাৎ আমি তার চাচি শাশুড়ি।

নির্বাচনে এর কোনও ইফেক্ট পড়বে না। কেননা তিনি এর আগেও একবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, গতবার ফেল করেছেন। এবার ভোটাররা আমাকে চাইছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমদিকে তার সঙ্গে আমার ভোট নিয়ে কোনও সমস্যা না হলেও গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে তার ভাই ও কর্মীরা (মান্নুর) আমার কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিয়েছেন। তারা শাসাচ্ছেন- এমনকী ভোটের পরে দেখে নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় সাবেক চেয়ারম্যান ও সুরোভী ইসলামের জামাতা এসএম সিরাজুল ইসলাম মান্নুর সঙ্গে। তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুরোভী ইসলাম হঠাৎ করেই ক্যান্ডিডেট হয়েছেন। গতবার নির্বাচনে আমি সামান্য ভোটে হারি। এবার নির্বাচনের শুরুতেই আমি মাঠে রয়েছি। এখন পর্যন্ত সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে, আশা করছি জনগণ বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে আমাকে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতি করি কিন্তু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছি। উনি (সুরোভী) বিএনপির কোন পদে বা দায়িত্বে রয়েছেন সেটি দলের কেউই জানেন না।

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এই ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াতের ভোটার বেশি। সেক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠ হলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা মার্কার প্রভাষক মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম সিরাজুল ইসলাম মান্নুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান চেয়ারম্যান প্রভাষক মফিজ উদ্দিনের পাল্লাটা ভারি বেশি।

স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন, ব্যক্তি হিসেবে দুই জনই ভাল। তবে, বর্তমান চেয়ারম্যান একজন শিক্ষিত মানুষ, কলেজের শিক্ষক, সৎ, মিষ্টভাষী। তাদের মতে, গত পাঁচবছরে তিনি ইউনিয়ন পরিষদকে ফুল, ফল ইত্যাদি গাছ দিয়ে সাজিয়েছেন অন্যরকমভাবে।

কাউন্সিল অফিসের ছাদে মনোরম একটি ছাদ বাগান করেছেন, প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন ভবনের বাইরের দিক, সামনের খানাখন্দক বন্ধ করে সুন্দর একটি জায়গা করেছেন। তাছাড়া সরকারি যেসব সাহায্য ইউনিয়নে আসে, সুষ্ঠ বণ্টনের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

ডিসেম্বর  ১৫.২০২১ at ১৭:১৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/শজ/ইসন