ইসলামে হালাল ও হারামের বিধান

মহান সৃষ্টিকারী ও প্রতিপালক হিসেবে শুধু আল্লাহর এই অধিকার আছে যে তিনি কোনো কিছুকে বৈধতা দেবেন এবং কোনো কিছুকে নিষিদ্ধ করবেন। যেভাবে তিনি অধিকার রাখেন বান্দাকে যেকোনো ধরনের আনুগত্যের নির্দেশ দেওয়ার।

বিপরীতে নির্দেশ অমান্য করার এবং তাঁর অবাধ্য হওয়ার কোনো অধিকার বান্দার নেই। এটা স্রষ্টা, প্রতিপালক ও উপাস্য হিসেবে মহান আল্লাহর অধিকার। কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অনুগ্রহশীল। তাই তিনি বান্দার কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্যই কোনো বিষয় গ্রহণ বা বর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর যেকোনো আদেশ-নিষেধ যেকোনো বিচারে যৌক্তিক ও কল্যাণের বাহক।

আরো পড়ুন:
চৌগাছায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বরণে মোমবাতি প্রজ্জলন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ভোলায় পুলিশের শ্রদ্ধা নিবেদন

আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপের শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ পূর্ববর্তী কোনো কোনো জাতির জন্য উত্তম ও বৈধ জিনিসও নিষিদ্ধ করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আমি ইহুদিদের জন্য নখযুক্ত সব পশু হারাম করেছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের জন্য হারাম করেছিলাম, তবে এগুলোর পিঠের অথবা অন্ত্রের কিংবা অস্থিসংলগ্ন চর্বি ছাড়া। তাদের অবাধ্যতার দরুন তাদেরকে এই প্রতিফল দিয়েছিলাম। নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী। (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪৬)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,  ভালো যা ইহুদিদের জন্য বৈধ ছিল আমি তা তাদের জন্য অবৈধ করেছি তাদের সীমালঙ্ঘনের জন্য, আল্লাহর পথে অনেককে বাধা দেওয়ার জন্য, তাদের সুদ গ্রহণের জন্য যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। তাদের মধ্যে যারা অবিশ্বাসী ছিল তাদের জন্য শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৬০-১৬১)

আল্লাহ তাঁর শেষ নবী (সা.)-কে চিরন্তন জীবনবিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর বিশেষ অনুগ্রহবশত অপরাধের শাস্তিস্বরূপ বৈধ বিষয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ধারা বন্ধ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মাধ্যমে আল্লাহ মানবজাতিকে এই বোঝা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, যে রাসুল তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে ও অপবিত্র বস্তু হারাম করে এবং যে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার থেকে ও শৃঙ্খলা থেকে যা তাদের ওপর ছিল। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

পাপমোচনের বিকল্প উপায় : ইসলামী শরিয়তে বৈধ বিষয়কে অবৈধ করার পরিবর্তে ভিন্ন উপায়ে পাপমোচনের অবকাশ রেখেছে। যেমন নিষ্ঠাপূর্ণ তাওবা পাপ মিটিয়ে দেয়, যেমন পানি খড়কুটো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ইসলাম বলছে, পুণ্যের কাজ পাপ দূর করে দেয়, দান-সদকা পাপ মার্জনা করে, যেভাবে পানি আগুন নিভিয়ে দেয়, দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে মুমিনের পাপ ঝরে যায়, যেভাবে শীতের কারণে গাছের পাতা ঝরে যায়।

ইসলামে কোনো বস্তুর বৈধতা ও অবৈধতা নির্ভর করে কল্যাণ ও অকল্যাণের ওপর। যে বিষয় ক্ষতিকর ও নোংরা তা মানুষের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। সুতরাং যে বিষয় বা বস্তু শুধুই ক্ষতিকর তা হারাম বা নিষিদ্ধ। যে বিষয় বা বস্তু শুধুই কল্যাণকর তা হালাল বা বৈধ। আবার যে জিনিসে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ বেশি সেটাও নিষিদ্ধ। যে বিষয়ে কল্যাণের দিক প্রবল তা হালাল বা বৈধ। মদ ও জুয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, লোকে তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য উপকারও কিন্তু তাদের পাপ উপকার অপেক্ষা বেশি। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৯)

অন্য আয়াতে তায়্যিবকে মানুষের জন্য হালাল ঘোষণা করা হয়েছে। তায়্যিব হলো মানুষের সুস্থ প্রকৃতি, যাকে উত্তম মনে করে এবং মানুষ যা লাভ করতে পছন্দ করে কোনো প্রকার আনুষঙ্গিক কারণ ছাড়া। আল্লাহ বলেন, তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে তাদের জন্য কী হালাল বা বৈধ করা হয়েছে, বলুন তাদের জন্য পবিত্র জিনিস বৈধ করা হয়েছে । (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪)

মুমিন কোনো কারণ অনুসন্ধান করা ছাড়াই আল্লাহর নির্দেশ মান্য করবে। কেননা হালাল-হারামের পেছনে যেসব কারণ আছে তা হয়তো তার জন্য ও তার সময়ে বোধগম্য নয়। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো সে আল্লাহ নির্দেশ অবগত হলে বলবে, আমি তা মেনে নিলাম। শূকরের মাংস ইসলামে নিষিদ্ধ। কিন্তু বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ জানার পর মানুষ জানতে পেরেছে শূকরের মাংস মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকর।  রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন কাজকে অভিশপ্ত বলেছেন। তা হলো মানুষের অবতরণের স্থান, চলাচলের পথে এবং ছায়াবিশিষ্ট স্থানে মলত্যাগ করা। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৬)

ডিসেম্বর  ১৪.২০২১ at ২১:৫০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/কক/ইসন