১৪ ডিসেম্বর শিবগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের মাত্র ১দিন আগে বগুড়ার শিবগঞ্জ থানা হানাদার মুক্ত হয়েছিল। এ কারণে উপজেলাবাসীর জন্য ওই দিন গুরুত্ব পূর্ণ দিন। ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা বাঙ্গালীর আত্ব পরিচয় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অবীস্বরনীয় সংগ্রামের দিন ১৪ ডিসেম্বর। ৭১ এর সেই স্বৃতি দীর্ঘ ৫০ বছরেও এই থানার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে। শিবগঞ্জে দেশের বিজয়ের মাত্র ১ দিন পূর্বে উড়েছিল বিজয়ের পতাকা। এই কারণে এ দিনটি শিবগঞ্জবাসীর কাছে স্বরনীয় একটি দিন। ১৪ ডিসেম্বর শিবগঞ্জ মুক্ত হলেও সারা দেশে চলে হানাদার বাহিনীর টান্ডব। তারা এই দিনে দেশের প্রাণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে  রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে। আর সেজন্যই এই দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

আরো পড়ুন:
যশোরে সোনা চোরাচালান মামলায় এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দুইজন খালাস
টাঙ্গাইলের সখীপুরে খাবার খেয়ে এক পরিবারের আটজন অচেতন

মুক্ত দিবসের কোন কর্মসূচী সরকারি ভাবে এই থানায় পালন করা হয়না তবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিনটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করে। স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, ৭১এ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের পর সারা দেশের ন্যায় শিবগঞ্জের মানুষ প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। তারা ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে। ২৩ মার্চ শিবগঞ্জ মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাহসিকতার সাথে পাকবাহিনীর পতাকা নামিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয় লাল সবুজের পতাকা। ছাত্রলীগ নেতা মরহুম আব্দুল মজিদ লাল সবুজের সেই পতাকা উড়িয়েছিলেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৫ মার্চের ভয়াবহ ঘটনা অত্র থানার মানুষকে উত্তেজিত করে তোলে।

তারা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য  উদ্দীপ্ত হয়ে হামলার জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। ২৬শে মার্চ তৎকালীন সাব-রেজিষ্টার লুৎফর রহমান কে আহবায়ক করে সর্ব দলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। এর পর ২৭শে মার্চ শিবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে খালি হাতে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ৭ এপ্রিল থেকে প্রশিক্ষণ জঙ্গি আকার ধারন করে। তারা বিভিন্ন প্রবেশ পথে গাছ কেটে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে শাহজাহান কবির বাদশা (বর্তমানে মৃত)তার দলবল সহ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে চলে যায়। মে মাসে হানাদার বাহিনী প্রথম শিবগঞ্জে আক্রমন চালায়। তাদের আক্রমনে সে দিন আবুল হোসেন নামের এক পানের দোকানদার নির্মম ভাবে শাহাদৎ বরণ করে। এরপর হানাদার বাহিনী থানার ময়দানহাট্টা গ্রামে ১১ জন নিরীহ মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। তখন থেকে শুরু হয় স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক চক্রের নির্যাতন-নিপীরন। রাজাকার আলবদররা প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে পাক সেনাদের সহায়তা করতে থাকে।

রাজাকারদের চক্রান্তের শিকারে নিখোজ হয় এক মধ্যবিত্ত পরিবারের থানা সদরের রবিন্দ্রনাথ মোহন্ত (বাদল)। তার ছেলে ডা: অসীম মোহন্ত জানায় ৭১ এর ১১ জুন স্থানীয় কতিপয় রাজাকারের সহযোগীতায় থানা পুলিশ কামালু স্থানীয় এক দফাদারকে সাথে নিয়ে আমার বাবাকে বাড়ী হতে ধরে নিয়ে যায়। থানায় ২৩ ঘন্টা আটক রাখার পর তাকে বগুড়া জেল খানায় চালান দেওয়া হয়। এরপর থেকে তার আর কোন খোজ পাওয়া যায়নি। হানাদার বাহিনীর সাথে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধ চলতে থাকে। ১৩ ডিসেম্বর মোকামতলা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে হানাদার বাহিনীর চরম সংঘর্ষ বাধে। এসময় টেংরা নামক স্থানে হাফিজার রহমান তার সহ যোদ্ধাদের নিয়ে হানাদার বাহিনীদের ধাওয়া করে। ঠিক সেই সময় হানাদারদের একটি বুলেট হাফিজারের বুকে লেগে তিনি শহীদ হন। হাফিজারই শিবগঞ্জে এক মাত্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। এর পর দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনে হানাদার বাহিনী তাদের অবস্থান গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়। ফলে ১৪ই ডিসেম্বর শিবগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়।

ডিসেম্বর ১৪.২০২১ at ১২:২৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সম/মক