চৌগাছা সীমান্তে আবারও অবৈধ ভাবে ভারত পারাপার, পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ব্যবসায়ীর

ছবি : প্রতিকি

যশোরের চৌগাছার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের মাশিলা গদাধরপুর-বয়রা বাওড় থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছেন থানা পুলিশ। মৃত রফিকুল ইসলাম জনি (৫৮) ঢাকার ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পুলিশ মরাদেহটি উদ্ধার করেন। উদ্ধার হওয়া মরাদেহ রাতে অজ্ঞাত পরিচয় থাকলেও শুক্রবারে তার পরিচয় মিলেছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

পুলিশ, এলাকাবাসি ও নিহতের স্বজন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে স্থানীয়রা বাওড়ে একটি মরাদেহ ভাসতে দেখেন। থানা পুলিশ খবর পেয়ে ওই রাতেই পানি হতে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এলাকাবাসি মৃত ব্যক্তিকে চিনতে না পারায় অজ্ঞাত হিসেবে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় মৃত ব্যক্তির নিকট হতে টুপি, তজবি, আতর, পাঞ্জাবি উদ্ধার করেন। থানা পুলিশ নিহত ব্যক্তির ছবি স্যোসাল মিডিয়া ফেসবুকে পোষ্ট দিলে স্বজনরা ছবি দেখে শুক্রবার খুব সকালে চৌগাছা থানায় আসেন এবং মরাদেহ শনাক্ত করেন।

নিহতের বড় ভাইয়ের জামাই যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের শাহারুল আলম আশা ও নিহতের ভাগ্নে যশোর সরকারী পলিটেকনিক কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোশরেক আহমেদ জানান, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম জনি (৫৮)। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, তবে পরিবারের অনেক সদস্যই ভারতে থাকেন। খুব ছোট বেলায় সে বাংলাদেশে চলে আসেন। এই দেশে পড়ালেখা করেন, তিনি সিভিল প্রোকৌশলী হওয়া সত্বেও কোন চাকরী করেননি। ঢাকাতেই বসবাস ও ব্যবসা করেন, তার স্ত্রী একজন ব্যাংকার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেড়াচাপায় নিহতের মা, বাবা, ভাই বোনেরা থাকেন।

গত বছর তার মা মারা যায়। করোনার কারনে সে সময়ে তিনি দেশে যেতে পারেনি। সম্প্রতি মায়ের কবর জিয়ারত করার জন্য ভারতে যেতে উদ্রিব হয়ে উঠে। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভারতে যাওয়া নিয়ে শংসয় দেখা দেয়। ধরনা করা হচ্ছে মাশিলা সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে সে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। নিহতের শরীরে কোন আঘাতের চিহৃ নেই বলে পুলিশ ও স্বজনরা জানান।

আরো পড়ুন :
বেনাপোল মুক্ত দিবস
ক্যাট-ভিকির বিয়ে ভেস্তে দেবে ওমিক্রন?

গদাধরপুর গ্রামের বাসিন্দা সংশ্লিষ্ঠ বাওড়ের নৈশ প্রহরী শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, রাতে বাওড় পাহার দেয়ার সময় লাশটি পানিতে ভাসতে দেখে গ্রামবাসিকে খবর দিই। এরপর বিজিবি সদস্যরা খবর পেয়ে বাওড়ে আসেন, তার পরপরই পুলিশ এসে মরাদেহটি উদ্ধার করেন। মাশিলা গ্রামের বাসিন্দা টিপু সুলতান জানান, রাত ১০ টার দিকে বাওড়ের পানিতে একজনের লাশ ভাসছে এমন খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যায়। পুলিশ এসে মরাদেহ উদ্ধার করেন।

থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুর ইসলাম লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার সকালে নিহতের স্বজনরা এসে মরাদেহটি শনাক্ত করেন। ময়না তদন্তেরর জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুরহস্য জানা যাবে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গদাধরপুর গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে শান্তিকে থানায় আনা হয়েছে।

একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সীমান্তে টহলে থাকা বিজিবি সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে গদাধরপুর-বয়রা বাওড় দিয়ে একটি দালাল চক্র মানুষ পারাপার করেন। বৃহস্পতিবার রাতে মৃত রফিকুল ইসলাম জনিসহ মোট ৩ ব্যক্তিকে ভারতে নেয়ার উদ্যোশে তারা বাওড়ে যান। বাওড় পার হলেই ওপারে ভারতের লক্ষীপুর গ্রামের দালাল জৈনক অভিজিৎ কুমার তাদের গ্রহন করবেন। পানিতে নামার পর ২ ব্যক্তি সাঁতরে বাওড় পার হলেও রফিকুল ইসলাম জনি পানিতে ডুবে যান। তাকে বাওড়ের পানিতে ফেলে রেখেই দালাল চক্র দুইজনকে নিয়ে ভারতে চলে যান। দালাল চক্রকে আটক করলে মৃত্যুর মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ডিসেম্বর ০৩.২০২১ at ২০:৩৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোমই/রারি