জাঁকজমকপূর্ণভাবে অন্যরকম এক বিয়ে!

সম্প্রতি বরিশালের মানুষ এক অন্যরকম বিয়ে উপভোগ করলেন। যেন দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোরই বিয়ে। পাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পাত্রীর দুটি হাতের একটিও নেই। তাতে কি, স্বাবলম্বী যুবক জাঁকজমকপূর্ণভাবেই বিয়ে করলেন দুহাতবিহীন তরুণীকে। আর একনজর এই বিয়ে দেখতে দাওয়াত ছাড়াই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন অনেকেই।

বুধবার (০১ ডিসেম্বর) রাতে বরিশালে ঐতিহ্যবাহী শঙ্করমঠ চত্বরে হিন্দু রীতি অনুযায়ী এই বিয়ে হয়। তারা নিজেদের ছোট থেকে চিনলেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় পাঁচ বছর আগে। হাত বিচ্ছিন্ন হলেও জীবন চলার পথ বিচ্ছিন্ন করেননি ওই নারী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওলোজি ও এনভায়রনমেন্ট থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এইচআর বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। আর এবার জীবনের নতুন আরেক অধ্যায় শুরু করলেন তিনি। দমে না যাওয়া এই নারী প্রেরণা হয়েছেন অনেকের। ভালো মনের একজন মানুষ বলেই সাত পাকে বেঁধে নিয়েছেন বলে জানান বর সুব্রত।

ফাল্গুনী  বলেন, ২০০২ সালে গলাচিপায় আমাদের পাশের বাড়ির ছাদে বসে বৈদ্যুতিক তারে দুর্ঘটনার কারণে দুই হাতই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমি নিজেকে কখনো দুর্বল মনে করিনি। দুই হাতের যতটুকু অংশ ছিল, ততটুকু অংশ দিয়েই আমি আমার পড়াশুনা শেষ করেছি এবং এখন চাকরিও করছি। আমি ২০১১ সালে মাধ্যমিক পাস করেছি গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ও ২০১৩ সালে উত্তরা ট্রাস্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করি। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওলোজি ও এনভায়রনমেন্ট সাবজেক্টে ২০১৮ সালে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করি। তারপর চাকরি জীবনে প্রবেশ করি।

ফাল্গুনী আরও বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনারা সকলেই অবগত। দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা ঠিক থাকলে প্রতিবন্ধকতা কোনো সাবজেক্ট নয়। আমাদের বিয়েটা দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করি। এই পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে কম প্রতিকূলতা পেরোতে হয়নি, সকলেরই আন্তরিকতা পেয়েছি। আপনারা সকলে আমাদের জন্য আশীর্বাদ ও দোয়া করবেন যাতে সামনের দিনগুলোতে আমরা ভালো থাকতে পারি, ভালো কিছু করতে পারি।

আরো পড়ুন :
জরুরি বৈঠক, জাপানি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে চীন
পথশিশুদের জাতীয় সেবায় অগ্রাধিকারের আহবান

সুব্রত মিত্র বলেন, ফাল্গুনীকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। ও যখন ভার্সিটিতে পড়তো, তখন ওর সঙ্গে আমার ফেসবুকে কথা হতো। একটা সময় বুঝতে পারি ও পড়াশোনায় অনেক ভালো করছে। তবে ওর ফ্যামিলি লাইফ বা সামনের দিকে আগানোর কোনো চিন্তা চেতনা ছিল না। ওর হাত নেই এটা আমার কাছে কোনো সমস্যা মনে হয়নি। একটা লোকের হাত নেই, তাই সে বিয়ে করতে পারবে না, তার ফ্যামিলি হবে না, এমনটা হতে পারে না। এমন চিন্তা চেতনা আমারও নাই। আমি ওকে স্বপ্ন দেখাই, আমি ওকে ভালোবাসা শেখাই এবং আমি ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানাই। সবশেষ আমরা বিয়েও করেছি। আমরা সামনের দিনে যেন ভালো থাকতে পারি আমাদের জন্য সকলে আশীর্বাদ করবেন।

দুইজনের গ্রামের বাড়িই পটুয়াখালীর গলাচিপাতে। দুই পরিবারের সম্মতিতেই উৎসবমুখর পরিবেশে হয় বিয়ের সব আয়োজন। তবে দাওয়াত ছাড়াও এই বিয়ে একনজর দেখতে জড়ো হন অনেকেই। শুভকামনা জানান নবদম্পতিকে।

সুব্রত মিত্রের ছোটবোন শ্রাবন্তী বলেন, আর পাঁচটা বিয়ে যেমন হয়, এখানেও তেমনিভাবে বিয়ে হয়েছে। কোনো ঘাটতি নেই। বরং অন্য বিয়ের থেকে এই বিয়ে ভালোভাবে হয়েছে।

এদিকে, শরীরের সৌন্দর্যই নয় জীবনকে সুন্দর করতে প্রাণে প্রাণ মেলাতে হয় বলে জানায় ওই নবদম্পতি। তাদের এই পথচলা অগণিত মানুষের প্রেরণা হবে বলেও আশাবাদ তাদের।

ডিসেম্বর ০২.২০২১ at ২০:২৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সনি/জআ