পেকুয়ায় ৫ ইউপিতে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীসহ জামানত হারালেন ২৬ প্রার্থী!

ইউনিয়ন নির্বাচন
ছবি: প্রতীকী

পেকুয়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ৬ ইউপির মধ্যে ৫ ইউপির পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করেছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। গোলাগুলি, হামলা, ব্যালট ছিনতাই ও বুথ ভাঙচুরের কারণে বারবাকিয়া ইউনিয়নের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ওই ইউনিয়নের একটি স্থগিত কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা সালামত উল্লাহ।

এদিকে, ৫ ইউনিয়নের প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে মোট ৪১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীসহ জামানত হারিয়েছেন ২৬ প্রার্থী। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, “মোট প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট না পেলে বিধি অনুযায়ী তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সেদিক থেকে মোট ২৬ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে জামানত হিসেবে তাদের কাছ থেকে নেয়া অর্থ প্রার্থীদের আর ফেরত দেয়া হবেনা বরং তা সরকারী কোষাঘারেই জমা হয়ে যাবে। ”ঘোষিত ৫ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদের ফলাফলে দেখা যায়, পেকুয়া সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১০ জন প্রার্থী। তৎমধ্যে ৭ জনই তাদের জামানত হারিয়েছেন। এ ইউনিয়নে মোট ৩০১৪৯ ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২১৬৯৮ জন ভোটার। ৮৩৩৬ ভোট পেয়ে টানা ৩য় বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম। তিনি নৌকা প্রতীকে ৫৯৩০ ভোট পেয়েছেন। আরেক হ্যাভিওয়েট প্রার্থী এডভোকেট রাশেদুল কবির ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৪৩২৫ ভোট। যারা জামানত হারালেন তারা হলেন উমর ফারুক (হাতুড়ি) প্রাপ্ত ভোট ১০৯, ছদর উদ্দিন ওমর রিয়াজ চৌধুরী (টেলিফোন) প্রাপ্ত ভোট ৭৭৬, নাছের গেফারী (হাতপাখা) প্রাপ্ত ভোট ৩০৮, নুরুল গাফ্ফার চৌধুরী (মোটর সাইকেল) প্রাপ্ত ভোট ১২২, মাহাবুবুল করিম (অটোরিকশা) প্রাপ্ত ভোট ৯০৭, ইউসুফ রুবেল (আনারস) প্রাপ্ত ভোট ৭২১, মোহাম্মদ ছরওয়ার উদ্দিন (টেবিল ফ্যান) প্রাপ্ত ভোট ১২৬।

মগনামা ইউনিয়নে এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন ১২ জন প্রার্থী। তৎমধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ২ জন ছাড়া বাকী ১০ জনই তাদের জামানত হারিয়েছেন। এ ইউনিয়নে মোট ১৪৪৬৮ ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১১৩৪৩ জন ভোটার। তৎমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে মাত্র ২৫ ভোটে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ইউনুছ চৌধুরী। নির্বাচনের প্রথমদিকে এই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও পরে উচ্চ আদালতে রীট করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে মাত্র কয়েকদিনের প্রচারণায় হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন এই প্রার্থী। নির্বাচনের শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই মগনামা ইউনিয়নেই মাত্র ১৪৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দেন নৌকার প্রার্থী মো: নাজেম উদ্দিন। তারসাথে আরো যারা জামানত হারিয়েছেন তারা হলেন, এস এম তৌহিদুল আলম নূরী (চশমা) প্রাপ্ত ভোট ৩১, গিয়াস উদ্দিন (টেবিল ফ্যান) প্রাপ্ত ভোট ৩৪, মোজাম্মেল হোছাইন (ঘোড়া) প্রাপ্ত ভোট ০৬, মো: ইউসুফ (হাতপাখা) প্রাপ্ত ভোট ৩৯, মো: আলমগীর (লাঙ্গল) প্রাপ্ত ভোট ৪৬, নুরুল আমিন (অটোরিক্সা) প্রাপ্ত ভোট ৩১৩, রিয়াজুল করিম চৌধুরী (আনারস) প্রাপ্ত ভোট ১৫, শহীদুল ইসলাম চৌধুরী (রজনীগন্ধা) প্রাপ্ত ভোট ২০, শাহেদুল ইসলাম (টেলিফোন) প্রাপ্ত ভোট ৩০।

শিলখালী ইউনিয়নে টানা ৩ বারের চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইনকে ৩৯৮ ভোটে হারিয়ে জয়ী হন সম্পূর্ণ নতুন মুখ কামাল হোছাইন। এই ইউনিয়নে ৬ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন মাত্র ২ জন প্রার্থী। যারা জামানত হারালেন তারা হলেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী শাহাজাহান (৫২২ ভোট) ও মোটরসাইকেল প্রতীকের শামশুদ্দিন আহমদ (১৮৮ ভোট)। এ ইউনিয়নে মোট ১০১৬১ ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৮০৮২ জন ভোটার। তৎমধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কাজিউল ইনসান পেয়েছেন ১৮৪৬ ভোট, আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু ছিদ্দিক পেয়েছেন ১১০১ ভোট।

আরো পড়ুন :
ইউপি নির্বাচন : ঝাঁপা ইউনিয়নে নির্বাচিত হলেন যাঁরা
ঘোড়াঘাটে অবৈধ ইমারত নির্মানের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজাখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৬ জন প্রার্থী। তৎমধ্যে ৩ জন প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। এই ইউনিয়নে মোট ১৬৮৮০ ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১২৩৪২ জন ভোটার। তৎমধ্যে নৌকা প্রতীকে ৪২১১ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত সমর্থিত হুমায়ূন কবীর পান ৩৭৮১ ভোট। অপর হ্যাভিওয়েট প্রার্থী ছৈয়দনূর পান ৩৬০৯ ভোট। জামানত হারানো প্রার্থী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী পান ২৮২ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াসমিন সোলতানা টেলিফোন প্রতীক নিয়ে পান ২৪৮ ভোট, সাঈদুল ইসলাম ঘোড়া প্রতীকে ৩৩ ভোট পেয়ে জামানত হারান।

উজানটিয়া ইউনিয়নে ৭ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন প্রার্থী তাদের জামানত হারান। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী টানা ২ বারের চেয়ারম্যান এটিএম শহিদুল ইসলাম চৌধুরীকে ১২০১ হারিয়ে এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম চৌধুরী। দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশে নিয়ে দল থেকে বহিষ্কারও হন তিনি। তার প্রাপ্ত ভোট ৩৬১২। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শহিদুল ইসলাম চৌধুরী পান ২৪১১ ভোট। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোছাইন এমজারুল পান ১৮৫৯ ভোট। জামানত হারালেন দেলওয়ার করিম চৌধুরী (রজনীগন্ধা) প্রাপ্ত ভোট ১৪, শফিউল আলম (ঘোড়া) প্রাপ্ত ভোট ১১, মো. শাহজাহান (হাতপাখা) প্রাপ্ত ভোট ৬৫ এবং রবিউল করিম মোটার সাইকেল প্রতীক নিয়ে ১২ ভোট পেয়ে জামানত হারান।

ডিসেম্বর ০২.২০২১ at ১৫:১৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমজু/রারি