অনিয়ম, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত পৌর মেয়রের অপসারনের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার দায়ে অভিযুক্ত দিনাজপুর পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সুষ্ঠতদন্তের স্বার্থে দায়িত্ব থেকে অপসারনের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে দিনাজপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও কমিশনাররা।

রবিবার (২৮ নভেম্বর)  সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত দাবী উপস্থাপন করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান নওশাদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমান দুর্নীতিবাজ মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে যেহেতু জেলা প্রশানের স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ হতে তার বিরুদ্ধে আনিত অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তদন্ত করার উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাই আমাদের দাবী তাকে মেয়রের পদ হতে অপসারণ করে সুষ্ঠুতদন্ত করা হউক।

আমরা জানি, মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অনিয়ম দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অযোগ্যতার কারণে এই পৌরসভার উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছেনা। তারা বলেন, মেয়র জাহাঙ্গীর কোথায় কোথায় সরকার বিরোধীদলের সদস্য হওয়ার কারণে তাকে ফান্ড দেয়া হয়না বলে অভিযোগ করেন,অথচ আমরা জানি তার বিভিন্ন অনিয়মের কারণেই তিনি সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে কোনো পি.পি উপস্থাপন করতে পারেন না। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, পৌরসভা আয়ের বড় খাত হচ্ছে ইজারা প্রদান,কিন্তু ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানেন না তিনি।

ইজারার শর্ত অনুযায়ী দরপত্রের ৭ কার্য্য দিবসের মধ্যেই ইজারার বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে হয় অথচ নীতিবর্হিভুতভাবে কিস্তি করে অর্থ আদায় করেন তিনি। ফলে পৌরসভার এক কোটি টাকা রাজস্ব আয় হুমকির মুখে। এছাড়াও ২০১৭-২০২১ এডিবি‘র আর্থিক সহায়তা তহবিলের ৩ কোটি ১৫ লাখ ২২ হাজার ৫ শত টাকার টেন্ডার ছাড়াই কাজ করেছে, যা তিনি কোনো ভাবেই করতে পারেন না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৌর বাজেটে বরাদ্ধ ছাড়াই ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বিধিবর্হিভুত ভাবে ১৫ লাখ টাকা বিতরণ দেখানো হয়েছে।

মাষ্টাররোলে ৪১০জনসহ চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগোর সুযোগ না থাকলেও তিনি ১৬২জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে এবং কোনোরুপ কাজ না করেই ১ শত জন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী পৌরসভার বেতন উত্তোলন করছে,যা চরম অনিয়ম ও দূর্নীতির মধ্যে পড়ে। এছাড়াও তিনি ব্যাটারী চালিত ইজিবাইকের নিবন্ধন ফি ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, টেন্ডার ছাড়াই ১০ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক বাল্ব ক্রয় এবং পৌর ফুলবাগানে আলোক সজ্জা করে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিল করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ভ্যাকুম ট্যাংকারের আয় থেকে পুকুর চুরি ও শহরে বিভিন্ন মোড়ে বিশাল বিশাল বিল বোর্ড থাকলেও আয়ের কোনো হিসাব বা হদিস নেই। মেয়র কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশে বিলবোর্ডের আয়ের পুরো অর্থ হরিলুট করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন :
জাবিতে ‘কালো দিবস’ পালন, স্মরনে ধ্বনি
কাহালুতে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

২০১১ সালের ১৫ ফেব্রয়ারী পৌর মেয়রের দায়িত্ব গ্রহনের সময় পৌর কোষাগারে জমা ছিলো প্রায় এক কোটি টাকা বর্তমানে সেই কোষাগার একেবারেই শুন্য এবং বিদ্যুত বিল বকেয়া ছিলো ২ কোটি ২৯ লাখ ৯৩ হাজার ৯৫২ টাকা,বর্তমান ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৪ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার ৭৮৫ টাকা। পৌর সভার হাজিরা খাতা থাকলেও কোনো রেজুলেশন বহি নেই! যা পৌর প্রশাসনকে লজ্জায় ফেলেছে। দিনাজপুর পৌরসভার যান্ত্রিক শাখায় চরম অনিয়ম দূর্নীতিতে ভরা। তন্মধ্যে অন্যতম খাত হচ্ছে গাড়ীর তেল,গাড়ি মেরামত,ব্যাটারী ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ ক্রয় খাতের মহালুটপাট চরছে।

বিগত পরিষদের ১৪ জন কাউন্সির একত্রে মেয়রের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দূর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার কারণে অনাস্থা প্রস্তাব আনরেও আজ অবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি যা পৌরবাসীকে হতাশ করেছে। সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভার সার্বিক উন্নয়নে ব্যর্থ সৈয়দ জাাহাঙ্গীর আলমকে পৌর মেয়রের পদ থেকে অপসারণ করে তার অনিয়ম দূর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার সুষ্ঠুতদন্তের দাবী করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে দিনাজপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক অতিরিক্ত দায়িত্ব মো. শরিফুল ইসলামের নিকট স্মারকলিপির কপি প্রদান করেন পৌরসভা সাবেক কাউন্সিলর জনকল্যান সংস্থার নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক কমিশনার আলেয়া বেগম মো. জাকির হোসেন রোমো, সাবেক কাউন্সিলর মোস্তফা কামাল মুক্তি বাবু, আশরাফুল আলম রমজান, ফয়সাল হাবিব সুমন, রোকেয়া বেগম লাইজু ও মাহমুদা খাতুন জোসনা প্রমুখ।

নভেম্বর ২৮.২০২১ at ১৫:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোআহো/রারি