বিভেদ ভুলে নৌকায় চড়তে ব্যস্ত শার্শার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, চারিদিকে নৌকার জয়জয়কার

ইউপি নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, দল থেকে বহিষ্কারের মত কঠোর সীদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শার্শা উপজেলার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে, দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন জানাচ্ছেন। নৌকায় চড়াই তাদের এখন মূখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা উপজেলা জুড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রার্থীতা বাতিলের সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। আর সেই সাথে শার্শায় কমেও এসেছে নির্বাচনী সহিংসতাও।

ইতিমধ্যে, ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে শার্শা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ১৫ জন নেতা কর্মিকে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে দলীয় বহিষ্কারের সুপারিশ করায় নড়েচড়ে বসেছেন শার্শা উপজেলার নেতা কর্মিরা। দলের এমন কঠোর সীদ্ধান্তে অনেকেই নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে, নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নিজের নাম। সমর্থন দিচ্ছেন নৌকা মার্কাকে।

শনিবার (২০ নভেম্বর) যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই সুপারিশকৃত বহিষ্কারের বিষয়ে জানানো হয়।

বহিষ্কারকৃতরা শার্শা উপজেলা ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন। দলীয় গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারার ১১নং উপধারায় বলা হয়েছে, ‘জাতীয় বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে দল থেকে সরাসরি বহিষ্কার হবেন এবং যারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করবেন তারা তদন্ত সাপেক্ষ মূল দল বা সহযোগী সংগঠন হতে বহিষ্কার হবেন’। এই ধারা অনুযায়ী তাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

শার্শা উপজেলার সুপারিশ বহিষ্কৃত নেতারা হলেন, শার্শার ডিহি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হোসেন আলী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সাইদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিল, লক্ষণপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুর রহমান, বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, গোগা ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তবিবর রহমান, পুটখালী ইউনিয়নের নবাগত আওয়ামী লীগ কর্মী নাসির উদ্দিন, গোগা ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তবিবর রহমান, কায়বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আলতাফ হোসেন, বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল খালেক, উলাশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়নাল হক, শার্শা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন, নিজামপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল আলম বাটুল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুর রহমান ও কর্মী সেলিম রেজা বিপুল।

অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলীয় কোন্দল ও বিভেদ ভুলে যাওয়ায় সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে নৌকার মনোনীত প্রার্থীরা।

উপজেলাবাসীর প্রত্যাশা, ২৮ নভেম্বর এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জয়জয়কার বয়ে যাবে।

অপরদিকে, দলীয় সীদ্ধান্তের প্রতি সন্মান রেখে, ইতিমধ্যে দলীয় বিদ্রোহী হিসাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন শার্শা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও শার্শা সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ও পুটখালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন।

আরো পড়ুন:
অবসরের ঘোষণা দিয়ে পাপনকে যা বললেন রিয়াদ
চোখ নিয়ে ভয়াবহ তথ্য দিলেন বিজ্ঞানীরা

নাসির বলেন, ইউনিয়নবাসীর ভালবাসায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু দলীয় নির্দেশনার বাইরে গিয়ে, বিভেদ সৃষ্টি করার পক্ষে আমি নই। তাই আমি নৌকার মাঝিকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।

চেয়ারম্যান সোহরাব বলেন, আমি আমার ইউনিয়নের সকল মানুষের ভালবাসার চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু আমি দলের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে, আমি আমার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলাম। আর আমার সমস্ত নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করে, দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন করলাম।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, নৌকায় ভোট দিলে মানুষ ভালো থাকে। নৌকায় ভোট দিলে মানুষের ভালো থাকার ও স্বস্তিতে থাকার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাই তিনি নৌকা মার্কাকে জয়যুক্ত করার আহবান জানান।

শার্শার এমপি শেখ আফিল উদ্দীন বলেন, আমি চাইনা শার্শার মাটিতে আওয়ামী লীগে, আওয়ামী লীগে আর কোন ভেদাভেদ থাকুক। তাই সব বিভেদ ভুলে, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাদেরকে প্রার্থীতা বাতিল করে নৌকায় চড়ার আদেশ দেন তিনি।

নভেম্বর ২৫.২০২১ at ১১:৩৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এএস/জআ