অভয়নগরকে আলোকিত করে রেখেছে এগারো শিব মন্দির

খুলনা বিভাগের যশোর জেলাকে আলোকিত করে রেখেছে অভয়নগরের ঐতিহাসিক স্থাপনা ঐতিহ্য ও পরিচয় এগারো শিব মন্দির। একাদশ শিব মন্দির বা ১১ শিব মন্দির। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি উপজেলার নামকরণের ইতিহাস। জড়িয়ে আছে এক দুঃখী রাজকুমারীর দুঃখগাঁথা। যেখানে দাঁড়ালে আজও শোনা যায় রাজকুমারীর কষ্টের ভারী নিঃশ্বাস। আজও সেখানকার সবুজ সিক্ত হয় রাজকুমারীর চোখের জলে।

জানা গেছে, ৩০০ বছর আগের ঘটনা। আঠারো শতকের গোড়ার দিককার কথা। মুঘল আক্রমণে পরাজিত ও বন্দী হয়েছেন যশোরের তৎকালীন প্রতাপশালী রাজা প্রতাপাদিত্য। জীবন বাঁচাতে রাজার বংশধরেরা যশোরের নানা দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজার এক বংশধর নীলকণ্ঠ রায় আশ্রয় নিলেন ভৈরব নদের তীরবর্তী অঞ্চলে।

এরই মধ্যে রাজা নীলকণ্ঠের ঘরে জন্ম নেয় এক ফুপফুটে রাজকন্যা। তার নাম রাখা হয় অভয়া। ভৈরব নদের আলো হাওয়ায় বড় হয়ে উঠে অভয়া। বিয়ের ক্ষণ এলো রাজকুমারীর। বিয়ে ঠিক হলো পার্শ্ববর্তী চিত্রা নদীর তীর ঘেঁষা অঞ্চল নড়াইলের জমিদার বংশের নীলাম্বর রায়ের সঙ্গে। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিয়ের কিছুদিন পরেই মারা যান নীলাম্বর রায়। বিধবা হলেন অভয়া দেবী। ছোটবেলা থেকেই অভয়া দেবী ছিলেন ধার্মিক। তিনি ছিলেন দেবতা শিবের উপাসক। বিধবা হওয়ার পর অভয়া দেবী চোখের জল মুছে পূজা অর্চনায় মন দিলেন। পিতার কাছে শিব মন্দির তৈরি করে দেওয়ার আবদার করলেন। পিতা নিঃসঙ্গ কন্যার আবদার পূরণে বিলম্ব করলেন না। ভৈরব নদের তীরে ১১টি শিব মন্দির তৈরি করে দিলেন। এলাকার নাম রাখলেন অভয়ানগর। কালক্রমে যা অভয়নগর হিসেবেই পরিচিতি পায়। কয়েক শতাব্দী পেরিয়ে ভৈরব নদের তীরে কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে সেই শিব মন্দির। এটি শুধু একটি মন্দির নয়। একই স্থানে এতগুলো শিব মন্দির বাংলাদেশে আর কোথাও নেই।

আরো পড়ুন:
স্বামী-স্ত্রী দেবরের ভোট যুদ্ধ এখন ‘টক অব দ্য রাঙ্গুনিয়া’
দুই’শ বছর পূর্তিতে বগুড়া ইতিহাস চর্চা পরিষদের নানা আয়োজন

সরেজমিনে, পূর্ব ও পশ্চিম সারিতে চারটি করে মোট আটটি মন্দির। দক্ষিণ দিকে প্রবেশপথের দু’দিকে রয়েছে দুটি মন্দির। মূল মন্দিরটি পশ্চিম দিকে। সব মিলিয়ে ১১টি মন্দির। প্রত্যেকটি মন্দির মাঝখানের উঠোনের দিকে মুখ করে অবস্থিত। স্থানীদের কাছ জানা যায়, প্রত্যেকটি মন্দিরে আগে একটি করে শিবলিঙ্গ ছিলো, পরে সেগুলো চুরি হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু মূল মন্দিরেই একটি শিবলিঙ্গ অবশিষ্ট রয়েছে। প্রবেশপথ মন্দিরের বাইরে দক্ষিণ দিকে দিয়ে। প্রতিটি মন্দিরের গায়ে রয়েছে পদ্মসহ নানা চিত্রের অনিন্দ্য সুন্দর কারু কার্য। মন্দিরের নির্মাণকাল ১৭৪৫-৬৪ সাল। দেয়ালের রং খানিকটা লালচে ও খয়েরি। মন্দির নির্মাণে ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্য রীতির চুন সুরকি এবং ইটের ব্যবহার করা হয়েছে। কয়েক শতাব্দী পেরিয়ে যেগুলো এখনও দৃশ্যমান। মন্দিরের চারপাশে একসময় প্রাচীর বেষ্টিত ছিলো। জরাজীর্ণ ও ভগ্নদশা হলেও এখনও সে প্রাচীরের চিহ্ন রয়েছে। তবে রাজা নীলকণ্ঠ রায়ের বাড়ির শেষ চিহ্নটুকুও অবশিষ্ট নেই।

নভেম্বর ২৪.২০২১ at ১৮:৩৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জাহ/জআ