দৃষ্টিনন্দন উড়াল সড়কে বদলে যাবে হাওরাঞ্চল

পাশাপাশি জেলা হলেও তাদের মধ্যে নেই সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এমন বোধহয় দেশের আর কোথাও নেই। হ্যাঁ, আমি বলছি সেই হাওরে ঘেরা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার কথা।

এখানে বর্ষায় হাওর যখন প্রাণ পায়, তখন সুনামগঞ্জের এক উপজেলার সঙ্গে আরেক উপজেলাও হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। সড়ক না থাকায় প্রসূতিসহ নানা রোগব্যাধিতে মেলে না জরুরি চিকিৎসাসেবা। শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয় সড়কের অভাবে। তাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জলভূমিকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর ফলে হাওর অঞ্চলে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাতে সহজ হবে। হাওরসহিষ্ণু অবকাঠামো উন্নয়নপূর্বক এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সরকার ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’-শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে পর্যটন আরও সমৃদ্ধ হবে। হাওর পরিস্থিতি সহনশীল অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে হাওর এলাকায় সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে, কৃষি উৎপাদন ও বিপণনে সহায়ক হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা এবং নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আসবে। প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে।

আরো পড়ুন:
কোটচাঁদপুরে ইজিবাইকের ধাক্কায় বাবার হাত থেকে ছিটকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে ট্রায়ালের অনুমোদন

জানা যায়, পানিতে তলিয়ে যাবে এমন ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার উপজেলা ও ২২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক এবং ৫৭টি সেতু ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রস্তাবিত উড়াল সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত উড়াল সড়কে যানবাহন চলাচল সম্ভব হবে। প্রতিবছর বর্ষাকালে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হাওর এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

প্রকল্প পরিকল্পনায় জানা গেছে, পর্যটকদের বিস্তীর্ণ হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দিতে উড়াল সড়কের দুই পাশে অন্তত ৬ থেকে ৭টি দ্বিতল টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হাওরের আওতাভুক্ত দুটি জেলার ৫টি উপজেলার জনগণ এর দ্বারা অর্থনৈতিক সুফল পাবে। বদলে যাবে এখানকার সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবেশ।

নভেম্বর ২৩.২০২১ at ১৯:৪৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বাট্রি/জআ