পাবনা সাঁথিয়ায় জবরদখলে ফসল নষ্ট করে মাছ চাষের অভিযোগ

পাবনা সাঁথিয়া উপজেলাতে অবৈধভাবে ধানি জমি জবরদখল করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে মাছ চাষের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার করমাজা ইউনিয়নের পারকরমা গ্রামের প্রায় অর্ধশত কৃষকের শাতাধীক বিঘা ধানের জমি দখল করে জাল দিয়ে আটকিয়ে মাছ চাষ করছে একটি সংঙ্গবন্ধ সন্ত্রাসী চক্র। আর এই কারনে ধানের আবাদ সঠিক ভাবে করতে পারছেনা বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় একজন পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করেছে এই চক্রের সদস্যরা। সন্ত্রাসীদের ভয়ে অনেকই এখন গ্রাম ছাড়া। আর এই সন্ত্রাসী চক্রের মদত দিচ্ছে স্থানীয় সন্ত্রাসী চক্রের প্রধান আব্দুল্লাহ নামের এক যুবক। এই গ্রুপের ৪০ থেকে ৫০ জনের সদস্য এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে জানাগেছে।

মাছ চাষের সাথে সম্পৃক্ত সংঙ্গবন্ধ চক্র প্রভাবশালী হওয়ার করনে দরিদ্র প্রান্তিক কৃষকদের কোন কথাই তারা কর্নপাত করছেন। আর তাদের কাজে বাধা প্রদানকারী বা প্রতিবাদকারীদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে এলাকাছাড়া করেছেন। সম্প্রতি এক কৃষকের ছেলেকে পিটিয়ে গুরুত্ব আহত করেছেন। সে এখন সাঁথিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করলেও কোন প্রতিকার পাইনি ভুক্তভোগী কৃষকেরা। এখন প্রান ভয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে আছেন অনেক কৃষক ও তার পরিবারের সদ্যরা।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. লুৎফর সরদার বলেন, আমার বাপ দাদার পৈত্রিক কৃষি ফসলের জমি এটা। এই জমি গুলো নিচু অঞ্চলে হওয়ার কারনে বছরের বেশিল ভাগ সময়ে পানি থাকে। আমরা বছরে দুটি করে ধানের আবাদ করে থাকি এখানে। সেচ দিতে হয়না বলে বেশ ভালো ধানের আবাদ হয়ে থাকে এখানে। কিন্তু বছর দুয়েক হলো এলাকার কিছু যুবক আমাদের মাঠের জমি অবৈধ ভাবে জবরদখল করে জমির চার পাশে জাল দিয়ে আটকিয়ে মাছ চাষ করছে। এখন আমরা যে ধান রোপণ করছি সেটির বেশিল ভাগই ওই চাষকৃত মাছ নষ্ট করে দিচ্ছে। যে কষ্টো করে এই ফসল করতে হয় সেই পরিমান ধান হচ্ছেনা মাছ চাষের কারনে। তাদেরকে অনেকবার বলেছি তারা আমাদের কোন কথাই শুনছেনা। তাদের ভয়ে এলাকার কেউ কোন কথাও বলেনা। আমরা পরিত্রাণ চাইছি এই সকল সন্ত্রাসীদের হাত থেকে। আমাদেরকে বাঁচান নইলে পরিবার পরিজন নিয়ে এলাকা ছাড়তে হবে, না খেয়ে থাকতে হবে আমাদের।

ভুক্তভোগী রাজ্জাক সরদার বলেন, আমরা অসহায় কৃষক জীবন নিয়ে ভয়ের মধ্যে আছি। রাতের বেলাতে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বাড়ির উপরে আসে। পরিবার পরিজন নিয়ে কি ভাবে থাকি বলেন। নিজের জমি চাষ করতে পারছিনা। ফসল ফলাবের দেচ্ছেনা। মগের মল্লুক হয়ে গেছে। ওরা যা খুশি তাই করতেছে। সবার কাছেই তো কলেম কোন কাজই হচ্ছেনা। দেশে অইন বলে কি কোন কিছু আছে। যে ধানের চাল খায়ে আমরা সবাই বাঁচি আর সেই ধান নষ্ট করে দিচ্ছে ওরা। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ভাই। সরকার কি কোন ব্যবস্থা করে দিবানা আমাদের।

এই জবর দখল ঘটনার প্রতিবাদ করায় অত্র এলাকার মো. জামিল আক্তার সুজন নামে এক কৃষকের সন্তানকেকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সে এই ঘটনার জন্য সাঁথিয়া থানাতে ১৫ নভেম্বর (সোমবার) একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

প্রাণ ভয়ে বাড়ি ছাড়া সুজন বলেন, আমার মতো এলাকার অনেকেই এখন বাড়িতে যেতে পারছেনা তাদের ভয়ে। পুলিশকে বল্লে বলে তোমরা বাড়িতে যাও দেখি কে কি করে। প্রতিদিন রাতেই তারা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমাদেরকে ধাওয় করে। এই ভাবে চলাচল করা যায় বলেন। জীবনের নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে জানিয়েছি পরবর্তীতে কি হবে জানিনা।

আরো পড়ুন:
হাফপাস’-এর দাবিতে মহাখালীতে সড়ক অবরোধ, শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতলো বাংলাদেশ

সম্প্রতি শিমুল হোসেন নামে এক যুবক প্রতিবাদ করায় তাকে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করা হয়েছে। সে বর্তমানে সাঁথিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত যুবক কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, স্যার আমাদের কাউকে বাড়িতে যেতে দিচ্ছেনা সন্ত্রাসীরা। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে ব্যপক ভাবে পিটিয়েছে। আমাদের চার বিঘা ফসলের জমি আছে ওই মাঠে তারা জবর দখর করে রেখেছে। এই অন্যায়ের কি কোন প্রতিকার পাবোনা আমরা। গ্রামের প্রায় ৫০জন কৃষকের জমি দখল করে তারা মাছ চাষ করছে। সকলেই এখন প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ঠদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আছে। অসহায় কৃষকদের জবর দখলকৃত জমি ফিরে পাবে তারা। আবারো সবুজ ধান আর সোনালী ধানে ভরে উঠবে মাঠ হাসি ফুটবে কৃষকের মুখে।

পাবনা সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে একটি ঝামেলা হয়েছে উভয় পক্ষের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সেখানে ধানের জমি দখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। এই বিষয়ে ইউএনও সাহেবের কাছে তারা অভিযোগ করতে পারে তিনি ভালো বলতে পারবেন।

ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহম্মেদ বলেন, ঘটনার বিষয়ে ওই কৃষকদের একটি প্রতিনিধি দল আমার কাছে এসেছিলো। তারা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে আমার কাছে। আমি সংশ্লিষ্ট থানা ও মৎস্য অফিসকে দিয়েছি বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। তবে নতুন করে কোন ঝামেলা হয়েছে কিনা আমি জানিনা। আমার কাছে তারা আর আসেনি। আপনাদের মাধ্যমে ঝামেলার কথা জানতে পারলাম। আমি এখনি খোঁজ নিচ্ছি আর আইনগত ভাবে যা করতে হয় সেটিই করা হবে।

নভেম্বর ১৭.২০২১ at ১৩:২৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মত/জআ