কুরআনের বিধান মেনে চলার নির্দেশ ও উপকারিতা

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য যে কিতাব দান করেছেন তা হলো ‘কুরআনুল কারিম’। এটা এমনই এক মহাপবিত্র গ্রন্থ; যার শুরুতেই আল্লাহ তাআলা এর সন্দেহ সংশয় নিরসন করে ঘোষণা দিয়েছেন-

‘এটা সেই কিতাব; যাতে কোনো সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই। মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক। (মুক্তাকিদের পরিচয়) যারা গায়েবে (অদৃশ্যে) বিশ্বাস করে, (ঠিকভাবে) নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ও তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর পথে) খরচ করে।

যারা বিশ্বাস করে আপনার (রাসুলের) প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি এবং তোমার আগে যা অবতীর্ণ করেছি তার প্রতি এবং যারা পরকালের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। উহারাই স্বীয় রবের প্রদর্শিত পথে অবস্থিত এবং তাহারাই মুক্তি পাবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২-৫)

পবিত্র কুরআনুল কারিমে ঘুরে ফিরে এ সব বিষয়ের বিভিন্ন আলোচনা পর্যালোচনা হয়েছে। যাতে রয়েছে মুসলিম উম্মাহর পথ-নির্দেশনা। যার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নেই সফলতা সুনিশ্চিত।

তাইতো যারা কুরআনের অনুসারী; তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। পরকালের কঠিন বিচারের দিনে তারা যে নিরাপদ ও বক্রতামুক্ত সহজ সরল পথের অনুসারী সে কথাও ওঠে এসেছে প্রিয়নবির পবিত্র বর্ণনায়-

হজরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) অনুসরন করে চলে,আল্লাহ তাআলা তাকে গোমরাহী (অজ্ঞতা) থেকে বাঁচিয়ে সত্যের পথে পরিচালিত করেন এবং কেয়ামতের দিন তিনি তাকে (ওই সব বান্দাকে) হিসাব-নিকাসের ভয়াবহতা থেকে মুক্ত রাখবেন। (তাফসিরে ইবনে কাছির)

কুরআন এমনই এক মহাগ্রন্থ, যা মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় ধ্বংসাত্মক ফেতনা থেকে মুক্ত রাখবে। মানুষ পাবে সঠিক পথের সন্ধান। যা হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ও প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথপোকথন থেকে বুঝা যায়-

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘শীঘ্রই ফেতনা দেখা দেবে। আমি জানতে চাইলাম হে আল্লাহর রাসুল! ফেতনা হতে বাঁচার উপায় কি?

তিনি বললেন, আল্লাহর কিতাব (কুরআন)।এতে তোমাদের অতীত ও ভবিষ্যতের সব খবরাখবর বিদ্যমান। আর তা তোমাদের চূড়ান্ত বিধান। এটা কোনো তামাশার বস্তু নয়।

যে দাম্ভিক কুরআন বর্জন করবে, আল্লাহ তাকে চূর্ণ করবেন। কুরআনের বাইরে গিয়ে যে ব্যক্তি হেদায়েত খুঁজবে, আল্লাহ তাআলা তাকে বিভ্রান্ত করবেন। এটা আল্লাহর মজবুত রশি। এটা শ্রেষ্ঠ উপদেশগ্রন্থ।

আর এ কুরআনই সিরাতুল মুসতাকিম। যা মানুষের খেয়াল খুশির নিয়ন্ত্রক। ভাষার বিভিন্নতাও কুরআনের বিভিন্নতা তৈরি করতে পারে না। আর কোনোদিনই আলিমগণের কাছে কুরআনের চাহিদা মিটবে না। হাজার চ্যালেঞ্জ দিয়ে ও এটা সৃষ্টি করা যাবে না।

আর (কখনো) কুরআনের বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যেরও কোনো ঘাটতি দেখা যাবে না। সেই বৈশিষ্ট্যের প্রবল আকর্ষণ জিন জাতিকে পর্যন্ত আকৃষ্ট করেছে। ফলে তারাও বলতে বাধ্য হল- ‘নিশ্চয় আমরা আশ্চর্য এক কুরআন শ্রবণ করেছি। যা সঠিক পথের নির্দেশ দেয়। তাই আমরা ঈমান এনেছি।’ (সুরা জিন)

সর্বোপরি কথা-
যারা পবিত্র কুরআনুল কারিমের আলোকে কথা বলে; নিজেরে জীবনে যাথযথ বাস্তবায়ন করে; সত্যকে অন্যের সামনে তুলে ধরে এবং আমল করে, সে পূণ্য ও সফলতা লাভ করে।

যে কুরআনের ভিত্তিতে রায় দেয়, সে ইনসাফ করে। আর যে নিজেকে ও অন্যকে কুরআনের দিকে আহ্বান করে, সে সিরাতুল মুসতাকিমের দিকে ডাকে। কুরআন ও হাদিসে ঘোষিত সফলতা তাদের জন্যই সুনির্ধারিত।
পক্ষান্তরে

আরো পড়ুন :
ভর্তিচ্ছুদের পাশে শহীদ রফিক-জব্বার হল ছাত্রলীগ
ফুলবাড়ীতে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন

যে কেউ কুরআনের বিধান অমান্য করবে, তার নেক আমল নষ্ট হয়ে যাবে এবং বিচার দিবসে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভূক্ত। এটাই আল্লাহ পাকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘যে কেহ বিধান অমান্য করবে ব্যর্থ হয়ে যাবে তার নেক এবং পরকালে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৫)

এ কারণেই হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন যে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বজ্রেকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন-
‘যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহ্‌কে নিজের রব, ইসলামকে নিজের দ্বীন এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে মেনে নিয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করেছে।’ (মুসলিম)

পরিশেষে…
মুসলিম উম্মাহর সঠিক পথ ও মতের ওপর চলার জন্য কুরআনই একমাত্র অনুকরণীয় গ্রন্থ। যা মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে সেই কথাই তুলে ধরেছেন-

‘হে আহলে কিতাব সম্প্রদায়! নিঃসন্দেহে তোমাদের কাছে এসেছে আমার রাসুল। সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে সত্য (আমার বিধান কুরআন) প্রকাশ করছে। অন্যান্য রাসুলের আগমন ধারা বিচ্ছিন্ন থাকার পর যদি তোমরা বল যে, আমাদের কাছে কোনো সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী আসেনি; অনন্তর অবশ্যই তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী (হিসেবে আমার রাসুল তোমাদের কাছে) এসেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সব কিছুর ওপর মহাক্ষমতাবান।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ১৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের চূড়ান্ত বিজয় দান করতে কুরআনের ওপর যথাযথ আমল ও প্রিয়নবির যথাযথ অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নভেম্বর ১৬.২০২১ at ২১:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/রারি/রারি