দ্রব্যমূল্য-যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধি জনগণের ‘বোবা কান্না’

মানুষের ছয়টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্য অন্যতম চাহিদা। বেচেঁ থাকার জন্য খাদ্য অপরিহার্য। আর এখন এই চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ জনগণ। বর্তমানে কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মাছের বাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এককথায় বাজারে আগুন জ্বলছে বলা যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ জনগণ।

সবজির দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। এমনকি অনেক সবজির দাম একদিনের ব্যবধানে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। আর পেয়াজ ও তেলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। চাল, ডাল, চিনির দাম এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পরিণামে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ সীমিত আয়ের মানুষ এবং মেসে-হলে থাকা ছাত্রছাত্রীরা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী এখন দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে ক্রেতা তার পছন্দ মতো ক্রয় করতে পারছেনা। কারন আয়ের উপর নির্ভর করে কি পরিমাণ ও কেমন দ্রব্য ক্রয় করবে, ভালোমন্দ কেনা। যেখানে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও, বৃদ্ধি পায়নি সাধারণ মানুষের আয়। মূল্য বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার ক্রয় করতে পারছেনা ফলে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে পরিবারের ছোট সদস্যরা অধিক মাত্রায়।

একেই তো এই সমস্যা তার সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে এখন ডিজেল ও কেরোসিনের বাড়তি দাম। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়াই যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ পরিবহন ভাড়া নির্ধারন করে দেওয়ার পরও মানা হচ্ছে না সেই নির্দেশনা। দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। গ্যাস দিয়ে চালিত পরিবহনগুলোও দাবি করছে যে তারা ডিজেল ব্যবহার করছে তাই ভাড়া বেশি নিচ্ছে। তাছাড়া বিশেষ তদারকি ছাড়া পরিবহন দেখে বুঝার উপায় নেই যে কোনটা ডিজেল দিয়ে চালিত কোনটা গ্যাস দিয়ে। ফলে পরিবহনগুলো সহজেই যাতায়াত ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে।
যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যা দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধি এবং জিনিসের দামের সঙ্গে তাঁদের শ্রমের মূল্য ও আয় বাড়েনি। এমন লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্যে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

এই পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে বোবা কান্না। আর যোগানের সীমাবদ্ধতার ফলে দ্রব্যের দাম বেড়ে যায় কিন্তু অনেক সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় মজুদ করে রাখে এবং বাজারে সংকটের সৃষ্টি করে। কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ের উপর বিশেষ নজর ও তদারকি করা প্রয়োজন। সরকারকে বাজারব্যবস্থা মনিটরিং করতে হবে। বাজারে নির্ধারিত মূল্যের তালিকা প্রনয়ণ করতে হবে। আর যাতায়াত ভাড়া নির্ধারিত ভাড়া থেকে যেনো বেশি না নেই, সাধারণ মানুষকে যেনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য কতৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফলশ্রুতিতে জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে।

লেখক- মানছুরা আক্তার সাদিয়া
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়