নরসিংদী ও কক্সবাজারে নির্বাচনী সংঘর্ষে নিহত ৪

নরসিংদী ও কক্সবাজারে নির্বাচনী সংঘর্ষে নিহতরা।

ব্যাপক সহিংসতা, মারামারি ও হতাহতের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলায় দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। এতে নরসিংদীতে তিনজন ও কক্সবাজারে ১ জন মারা গেছেন। এই ধাপে ২৬টি ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

নরসিংদীর রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোর সাড়ে ৩টার দিকে রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর কক্সবাজারে খুরুশকুল ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬ জন। নিহত আকতারুজ্জামান খুরুশকুল ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) শেখ কামালের ছোট ভাই।

স্থানীয়রা বলেন, বৃহস্পতিবার ভোট চলাকালে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী বাবুলের সমর্থকরা ব্যালট পেপার আলাদা করে সিল মারার চেষ্টা করেন। এ সময় অপর মেম্বার প্রার্থী শেখ কামালের ভাই আকতারুজ্জামান বাধা দেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে আকতারুজ্জামানকে কোপানোর পর গুলি করা হয়। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপে তিনজনের মৃত্যু এবং অর্ধশতাধিক প্রার্থী-সমর্থকের আহত হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় ধাপের ভোট ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে প্রার্থী-বিরোধী প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। এরই মধ্যে এসব সহিংসতায় ১০-১১ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মধ্যে যে উৎসাহের আমেজ বিরাজ করার কথা, এই নির্বাচনে তা নেই।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন ৩৩৯ জন নির্বাহী হাকিম এবং ৩৩১ জন বিচারিক হাকিম। মোট ৬৭০ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিশাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে মাঠে রয়েছেন। কোথাও কোনো গণ্ডগোল বা অনিয়মের খবর পাওয়া গেলে তারা তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড টহল দিচ্ছে। সহিংসতাপ্রবণ এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।

আরো পড়ুন:
নরসিংদীতে নির্বাচনী সংঘর্ষে নিহত ২
ভোলায় উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে ভোট গ্রহণ, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জরিমানা

এ নির্বাচনে সরাসরি বিএনপি অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি চেয়ারম্যান-মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া আছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীও। সব মিলিয়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটছে। তাছাড়া বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় ‘অস্বস্তি’ ও ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিইসি বলেছেন, প্রয়োজনে সহিংসতাকারী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। গণ্ডগোল হলেই ভোটগ্রহণ বন্ধ করারও নির্দেশনা দেন তিনি। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীকে তাদের তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেন সিইসি।

নভেম্বর ১১.২০২১ at ১৫:১৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভক/জআ