পেকুয়ায় ৭ম শ্রেনীর এক স্কুল ছাত্রীকে কাবিননামায় স্বাক্ষর করালেন কাজী ওয়াহিদ

ছবি: প্রতিকি

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ৭ম শ্রেনীর এক স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া জন্নাত সুমি (১৪) কে কাবিন নামায় স্বাক্ষর করালেন কাজী ওয়াহিদ। ওয়াহিদ শিলখালী ইউপি সংলগ্ন কাজী অফিসের কাজী।

বেশ কয়েকদিন ধরে এই অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কিশোরী ওই স্কুল ছাত্রীকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে ঠিকফর্দ চুড়ান্ত করেছে কনের পরিবার। সুমাইয়া জন্নাত সুমি রাজাখালী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মাতবরপাড়ার সৌদিপ্রবাসী রুস্তম আলীর মেয়ে ও রাজাখালী ফৈয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী।

স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া জন্নাত সুমিকে বিয়ে দিতে পারবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুমতি দিয়েছেন বলে প্রচার করে কাবিন চুড়ান্ত করেছে। গত ৬ নভেম্বর বিকালে উভয় পক্ষের লোকজন গোপনে শিলখালী এ কাজী অফিসে গিয়ে মেয়েকে কাবিন নামায় স্বাক্ষর করালেন ততা কথিত কাজী ওয়াহিদ। সেই নিজেই মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ওই স্কুল ছাত্রী কে বাল্য বিয়েতে কাবিন করিয়েছেন একই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের হাজীর পাড়া এলাকার বাসিন্দা ও আরবশাহ বাজারের ব্যবসায়ী ফজল কাদের সওদাগরের পুত্র আজমগীরের সাথে।

বর প্রাপ্ত বয়ষ্ক। পাশাপাশি বর রাজাখালী ইউনিয়নের আরবশাহ বাজারের একজন ব্যবসায়ী। ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে হবু বর হিসেবে পেয়ে মেয়েটির মা-বাবা তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে অনেকটা বাধ্য করছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

সুমাইয়া জন্নাত সুমি বয়সে কিশোরী। এখনো বিয়ে করার মত বয়স হয়নি মেয়েটির। অভিভাবকরা মেধাবী ওই ছাত্রীকে বাল্য বিয়েতে বাধ্য করছেন বলে স্থানীয়রা দাবী করছেন।

স্থানীয়রা জানান, স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া জন্নাত সুমির সাথে আরবশাহ বাজারের ব্যবসায়ী আজমগীরের বিয়ে হতে গত কিছু দিন আগে দুই পরিবারের সম্মতিতে এনগেইজমেন্ট হয়েছে। পাত্র পাত্রী দেখাদেখির সময় বরপক্ষ কনেকে উপহার সামগ্রীও পৌছিয়ে দিয়েছে।

শুক্রবার ২৯ অক্টোবর বিয়ের আনুষ্টানিকতার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সুমাইয়া জন্নাত সুমি রাজাখালী ফৈয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রী। এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে এ প্রতিবেদক বুধবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ফৈয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন।

তথ্য সংগ্রহের সময় দেখা গেছে, সুমাইয়া জন্নাত সুমি ফৈয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত।
ওই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর খ শাখার ছাত্রী সুমি। তার রোল নং ৯৫। ২০১৯ সালে সুমি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তার বয়স ১৪ বছর। এ বাল্য বিয়ের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমাকে অবগত করা হলে তিনি সরেজমিনে গিয়ে উভয়পক্ষ কে ওই বিয়ের আয়োজন বন্ধ করার তাগিদ দেন।

কিন্ত এ আদেশ অমান্য করে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে বিয়ের কাবিননামা সম্পন্ন করেছেন। তবে স্কুলের তথ্য এর সাথে বর্তমান জন্ম নিবন্ধনের বয়সে কোন মিল নেই। তারপরও বয়সকে তোয়াক্কা না করে বাল্যবিয়ের আইনকে বৃদ্ধ আঙুলি দেখিয়ে অতি উৎসাহিত হয়ে কাজী ওয়াহিদ অর্থের বিনিময়ে এ বিয়ে পড়িয়েছেন।

আরো পড়ুন :
ক্লিন ফিড চালু থাকলে দেশীয় টেলিভিশন লাভবান হবে- অ্যাটকো সভাপতি
ঝালকাঠিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বসতঘর ভাংচুর করে মালামাল লুটের প্রতিবাদে মানববন্ধন

সুমির মা নাসিমা বেগম জানান, মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নন। বয়স ১৮ বছর পূর্ন হয়েছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ নিয়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, আসলে বয়স হয়নি। আমাদের ধারণা মেয়েটিকে বিয়ে দিতে তারা জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রস্তুত করেছে। সেটি উপস্থাপন করে কাবিন সম্পাদন করছে।

ফৈয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বিষয়টি আমাকে অবহিত করা হয়েছে। আমাদের কোন ছাত্রী বাল্য বিয়ের মতো জটিল পরিস্থিতিতে পড়বে সেটি আমরা মোটেই সমর্থন করবো না। তবে সে অনিয়মিত ছিল।

এ বিষয়ে শীলখালী কাজী অফিসের কাজী ওয়াহিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই মেয়ের কাবিন করার সত্যতা নিশ্চিত করেন। বয়স হয়নি মেয়েটিকে কেন কাবিন করালেন জানতে চাইলে তিনি বলেন তারা একটা জন্ম নিবন্ধন সনদ এনেছে। ওই সনদে সে ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনেক বার চেষ্টা করেও মুঠোফোনে সংযোগ না পেয়ে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

নভেম্বর ০৭.২০২১ at ২৩:০৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমজো/রারি