যশোর শিক্ষাবোর্ডে ২৬ টি চেক জালিয়াতির টাকা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যহত

যশোর শিক্ষাবোর্ডে ২৬ টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৫ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৮ টাকা আত্মসাত করেছে একটি চক্র। বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেনের আমলে পুরো ঘটনাটি উন্মোচিত হয়েছে। চেয়ারম্যানের নির্দেশে গঠিত অডিট টিম জাল চেক প্রমাণ টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঘটনার প্রকৃত রহস্য করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। তার সাথে দুদকেও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে দুদক ও শিক্ষাবোর্ড কড়া তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরের আয় ব্যয় হিসাব মিলিয়ে বুঝিয়ে দেবার জন্য নথিতে ড.মোল্লা আমীর হোসেন ২৩ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেন। সেই মোতাবেক ডিডি (হিসাব ও নিরীক্ষা) ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা যাচাই বাছাই করেন। ৭ অক্টোবর ডিডি লিখিতভাবে এই অর্থবছরে ৯ চেক জালিয়াতির কথা চেয়ারম্যানকে জানায়, যাতে দেখা যায় যে, ৯টি ভ্যাট ও আইটির চেকের মুড়িতে অনুমোদিত পরিমান টাকার অংক থাকলে মূল চেকে ভেনাস প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং, শাহীলাল এন্টারপ্রাইজ কোম্পানির নামে আড়াই কোটি টাকা ভিন্ন একটা ফন্টে প্রিন্ট দেয়া।

এই ফন্ট বোর্ডে চেক প্রিন্টের জন্য ব্যবহৃত ফন্ট নয়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় । তারপর বোর্ডের পক্ষ থেকে দুদকে অভিয়োগ দায়ের করা হয়। ৭ অক্টোবরের পর থেকেই হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম পলাতক রয়েছে। একদিন পর লিখিতভাবে জালিয়াতির দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়া একটি আবেদন পাঠায়, আবেদনের সাথে ১৫ লক্ষ ৪২ হাজার টাকার একটা পে অর্ডার জমা দেয় এবং পর্যাক্রমে সবটাকা ফেরত দিবে বলে অঙ্গীকার ও সময় প্রার্থনা করে।

সে দুদকে ও বোর্ডের তদন্ত টিমের কাছেও এককভাবে দায়ী বলে দোষ স্বীকার করেছে। দুদক অভিযোগের প্রেক্ষিতে আব্দুস সালামকে দুদক অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করে, কোম্পানির মালিকদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। তারা সেখানে দায় স্বীকার করেছে এবং বোর্ডের কেউ জড়িত নয় বলে মত ব্যক্ত করেছে। এরপর ও চেয়ারম্যান ও সচিবকে বিবাদী করে দুদক স্পেশাল জেলা জজ, যশোরের আদালতে একটা মামলা করেছে। যার নম্বর ৪/২০২১।

জালিয়াতকৃত চেক এখনো ব্যাংকে জমা রয়েছে, তাতে দৃশ্যমান স্বাক্ষর এক্সপার্ট দ্বারা যাচাই না করে ও ভিন্ন ফন্টের লেখার রহস্যেউদ্ঘটন না করার প্রয়োজন। তাহলে জালিয়াতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। এরপর বিগত বছরগুলোর হিসাবও যাচাই করতে হয়। সেখানে প্রমাণ মেলেছে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছরই জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা জালিয়াতরা হাতিয়ে নিয়েছে। সেসব বছরের মন্ত্রণালয়ের অডিট হওয়া সত্ত্বেও তা তখন ধরা পড়েনি।

আরো পড়ুন :
কোটচাঁদপুরে প্রয়াত পৌর চেয়ারম্যানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা
চৌগাছায় বিএমএর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মানববন্ধন

অডিটের সাথে ডিডি ও অডিট অফিসার সরাসরি জড়িত। কীভাবে ওভার লুক করা হলো বা নিষ্পত্তি হলো সেই বিষয়টি এখন সবার কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছ। সাধারণ কর্মচারিরা বলছেন, বর্তমান চেয়াম্যান জড়িত থাকলে তিনি নিশ্চয়ই অভ্যন্তরীন স্পেশাল অডিট না করিয়ে অতিতের সময়ের ন্যায় নিষ্পত্তি করতেন। বরং তিনি দীর্ঘদিনের এক জালিয়াত চক্রকে ধরেছে। এতে যেমনি জালিয়াতির পথ বন্ধ হবে, তেমনি এসব টাকা রিকভারি সম্ভব হবে। এজন্য তাকে পুরস্কৃত না করে আসামীর কাটগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। এ রকম হলে ভবিষ্যতে কেউ এই সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না।

চক্রটি ২০১৬ সাল থেকে২০২০ সাল পর্যন্ত ১৬ টি চেক ও ২০২১ সালে ১০ টি চেক জালিয়াতি করে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শিক্ষাবোর্ডের একক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন কর্মচারি ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত আব্দুস সালাম হিসাব বিভাগে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আবুল কালাম আজাদের নামে অভিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং ও প্যাকেজিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম বাবুর গভীর সখ্যতা ছিল। সবাই আঙ্গুল তুলছেন এসবের মূলহোতা আবুল কালাম আজাদ। তিনি শরিফুল ইসলাম বাবু ও হিসাব সহকারি আব্দুস সালামের দিয়ে এসব করেছেন।

চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, দুদক ও শিক্ষাবোর্ড প্রশাসন আলাদাভাবে তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে মামলাও হয়েছে। প্রকৃত দোষীদের কোনভাবেই রেহায় পাওয়ার সুযোগ নেই। আশা করা আদালতের মাধ্যমে পুরো ঘটনার নিষ্পত্তি হবে।

অক্টোবর ২৪.২০২১ at ২১:৪২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/রআ/রারি