দৌলতপুরে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যানরাই নৌকার টিকেট পেলেন

সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যানরাই আবারো নৌকার টিকেট পেয়েছেন। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তাদের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অনেকের কাছেই বর্তমান চেয়ারম্যান প্রত্যেকেরই দলীয় প্রার্থীতা বহাল থাকার ঘটনাটি অবিশ্বাস্য হয়ে ওঠে।

এ ব্যাপারে দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের সংশয় দূর করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ অথবা বিবৃতি না দেয়া হলেও শনিবার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে তাদের মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এদিকে বর্তমান চেয়ারম্যানরাই পুনরায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় তাদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ছিটকে পড়ায় মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনেকের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনীত হওয়া বর্তমান চেয়ারম্যানরা হলেন- প্রাগপুর ইউনিয়নের আশরাফুল ইসলাম মুকুল, মথুরাপুর ইউনিয়নে সরদার হাশিম উদ্দিন হাসু, ফিলিপনগর ইউনিয়নে এ. কে. এম. ফজলুল হক কবিরাজ, মরিচা ইউনিয়নে শাহ আলমগীর, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে সিরাজ মণ্ডল, চিলমারী ইউনিয়নে সৈয়দ আহমেদ, হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নে সেলিম চৌধুরী, পিয়ারপুর ইউনিয়নে আবু ইউসুফ লালু, রিফায়েতপুর ইউনিয়নে জামিরুল ইসলাম বাবু, দৌলতপুর সদর ইউনিয়নে মহিউল ইসলাস, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে মকবুল হোসেন, বোয়ালিয়া ইউনিয়নে মহিউদ্দিন বিশ্বাস, খলিসাকুণ্ডি ইউনিয়নে সিরাজুল ইসলাম এবং আড়িয়া ইউনিয়নে সাঈদ আনছারী বিপ্লব।

তারা সবাই কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সিনিয়র সহসভাপতি আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরীর সময় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অর্থাৎ সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরীর মনোনীত প্রার্থী ছিলেন সবাই। যদিও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এই চেয়ারম্যানদের অনেকে এমপি সরওয়ার জাহান বাদশার সঙ্গে মিশে যান। কেউ কেউ সাবেক এমপি রেজাউল চৌধুরীর সঙ্গেই থেকে যান।

এদিকে সবাইকে তাক লাগিয়ে অনেকটা নাটকীয়ভাবে বর্তমান চেয়ারম্যানরাই ফের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনীত হয়ে নৌকার টিকেট লাভ করায় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা কিংবা পাইপলাইনে থাকা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঘটনার আকস্মিকতায় তাদের মাঝে নেমে এসেছে এক ধরনের হতাশাও। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তেমন কারো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও কেউ কেউ দলের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন বলে সাধারণ নেতাকর্মীদের অনেকে ধারণা করছেন।

অন্যদিকে হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নে মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনায় থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একজন ডোনার হিসেবে পরিচিত হাজি হুমায়ন কবির শনিবার রাতে ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, কপালে ছিল না তাই দলীয় মনোনয়ন পাইনি। তবে কারা কী করবেন তা আমার জানা নাই। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে চাই না। দলীয় এই সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য রেখে আগামী বারের জন্য নতুন করে প্রস্তুতি গ্রহণ করবো। সুতরাং বিদ্রোহী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

আরো পড়ুন:
কোটচাঁদপুরে জানাযা পড়াকে কেন্দ্র করে ইমামকে মারধর, এলাকায় উত্তেজনা
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক, মহাসচিব দ্বীপ

এর আগে দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের দুই শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় প্রার্থীতার জন্য আবেদন করেন। তারা রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন এবং জমা দেন। গত ২০ অক্টোবর ছিল মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ দিন। এর পাঁচ দিনের মধ্যেই চূড়ান্তভাবে মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করার কথা জানানো হলেও দুই দিনের মাথায় বর্তমান চেয়ারম্যানদেরই বহাল রেখে এই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার ঘটনায় অনেকেই প্রথমের দিকে বিষয়টি অবিশ্বাস্য বলে মনে করেছেন। শুক্রবার রাতেই ফেসবুকে এই তালিকা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও বিষয়টি অনেকের কাছে অস্পষ্ট মনে হয়। তাদের মধ্যে এক রকম ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সর্বপ্রথম আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈদ আনছারী বিপ্লবের ছোট ভাই তাশফিন আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট থেকে এই প্রার্থী তালিকা দেখা যায়। এরপর মুহূর্তেই তা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদের পাশাপাশি রাত ১১টা ৪০ মিনিটে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমন ফেসবুক পোস্টে ১৪ ইউনিয়নের এই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। অধ্যক্ষ্য সুমনের পোস্ট সামনে আসায় তাৎক্ষণিকভাবে কারো কারো মধ্যে বিষয়টি খানিকটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। তবে তারপরেও অনেকেই এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন। অবশেষে শনিবার সবার কাছেই বর্তমান চেয়ারম্যানদেরই নৌকার টিকেট পাওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তাদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে বইতে থাকে আনন্দের বন্যা। এর মধ্য দিয়ে মনোনয়নকেন্দ্রীক সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে।

অক্টোবর  ২৩.২০২১ at ২৩:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এআস/জআ