দৌলতপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই শতাধিক, শুরু হয়েছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলটির দুই শতাধিক ব্যক্তি ঢাকায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর আগে স্থানীয়ভাবে ১৬৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীতার জন্য আবেদন করেন। দলীয় মনোনয়নের জন্য সুপারিশ চেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাছে আবেদন ফরম জমা দেন তারা। এর পরপরই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঢাকার দিকে ছোটেন। ইতোমধ্যে মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। অনেকে এখনো ঢাকায় অবস্থান করে নেতাদের আনুকূল্য লাভের চেষ্টা করছেন।

গেল ১৬ অক্টোবর দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সেমিনার কক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে এখানকার ১৪ ইউনিয়নের প্রার্থীদের আবেদন ফরম গ্রহণ করা হয়। দিনভর এই কার্যক্রম চলে। পরে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক ১৬৪ জনের তালিকা (ইউনিয়নভিত্তিক) প্রকাশ করা হয়। এর পরের দিনেই ১৪ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন এই ‘ব্যালেন্সিং’ কমিটি সামনে আসায় মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার বিষয় নিয়ে অনেকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে।

মনোনয়নের জন্য স্থানীয়ভাবে আবেদনকারীদের মধ্যে সব ইউনিয়নেই তরুণ ও নতুন মুখের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এসব আবেদন গ্রহণের শেষে ওইদিন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ. ক. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্, এমপির সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আবেদনকারী বিভিন্ন ব্যক্তি প্রসঙ্গে দলে অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে বলে জানা যায়।

এখানকার চেয়েও আবেদনকারীদের সংখ্যা আরো বেড়ে যায় ঢাকায়। এখানে আবেদন ফরম জমা দেয়ার একদিন পর রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন এবং জমা দেয়ার হিড়িক পড়ে যায়। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনের আগের দিন পর্যন্ত মোট ২১৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে গত ২০ অক্টোবর শেষ দিনে আরো কতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। এত বেশি সংখ্যক ব্যক্তি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন তা কারো ধারণাতেই আসেনি। এতে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে গেছে। যদিও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এই ছড়াছড়ি অবস্থাকে অনেকে অন্যভাবেও দেখছেন। তারা মনে করছেন, বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। তাও আবার দলটি দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এত বড় একটি দলে প্রার্থীতার জন্য অনেকেই প্রত্যাশা করবেন এটাই স্বাভাবিক।

এছাড়া কেউ কেউ পরবর্তীবারের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কেন্দ্রে পরিচিত হতে গেছেন। কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে শো অফ করার চেষ্টা করেছেন। কেউ আবার অনেকটা ডামি প্রার্থীর মতো মূল প্রার্থীদের কাছ থেকে কিছু টাকার বিনিময়ে শেষ পর্যন্ত বসে পড়ার মিশনও হাতে নিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই শেষমেষ সরে দাঁড়াবেন বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপে আগামী ২৮ নভেম্বর দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কিংবা নৌকা প্রতীকের টিকেট পেতে আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তারা অনেকে নেতাদের কাছে ধর্না দিয়ে আনুকূল্য লাভের আশায় প্রতিদিনই ঢাকামুখী হচ্ছেন। বর্তমানে অনেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। দলের একাধিক সূত্র মতে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করছেন। শেখ হাসিনার গ্রিণ সিগন্যাল ছাড়া কারো ভাগ্যেই নৌকার টিকেট মিলবে না। ফলে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ তেমন কোনো কাজে আসবে না।

বর্তমান চেয়ারম্যানদের মধ্যেও অনেকে এবার দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। স্থানীয়ভাবে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আবেদন গ্রহণের পরের দিনেই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি প্রকাশ করা হয়। কারা মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন নতুন এই কমিটি সামনে আসার পর তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এ কারণে দলীয় মনোনয়নের আশায় বুক বেঁধে থাকা অনেকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে। ইউনিয়ন কমিটি প্রকাশের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি ব্যালেন্স করার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও দলের অনেকে মনে করছেন। ফলে মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার ব্যাপারে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দোলাচলের মধ্যে রয়েছেন। তারপরেও তারা হাল ছেড়ে দেননি। বিভিন্নভাবে দলীয় প্রতীক নৌকার টিকেট পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরো পড়ুন:
‘জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২১’ উদযাপিত ও টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন
কেরানীগ‌ঞ্জের চমক মেম্বার প্রার্থী হান্নান মিয়া

এদিকে কারা দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাচ্ছেন এ নিয়ে সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। তবে যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়া হবে বলেই প্রত্যাশা করছেন সবাই। মনোনয়নবঞ্চিত হলে কেউ কেউ বিদ্রোহী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রার্থীতা নিয়ে। এই ইউনিয়নে ১৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও মূলত আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরীর ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী এবং দলটির বড় একজন ডোনার হিসেবে পরিচিত হাজি হুমায়ন কবির। এই দুজনেরই এলাকায় শক্ত অবস্থান রয়েছে। এদের একজনই দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে অনেকের ধারণা।

দলীয় সূত্র মতে, আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যেই ঝুলে থাকা মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। শুরু হবে পুরোদমে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা। অন্যদিকে বিএনপি দলীয়ভাবে ধানের শীষ প্রতীকে সরাসরি নির্বাচনে না আসলেও এখানকার সব ইউনিয়নেই দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভিন্ন প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে এই দলের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এখানকার আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ত্যাগী, আদর্শবান ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের এখানকার লোকজন চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে সবদিক বিবেচনা করে যোগ্য ব্যক্তিদের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃত্বে বা নতুন কমিটিতে আনা হয়েছে। মনোনয়নের ব্যাপারে দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

অক্টোবর  ২১.২০২১ at ১১:১৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এআস/জআ