পেকুয়ায় হামলা ও সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ায় চিকিৎসাধীন রোগীর বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজারের পেকুয়ায় পুলিশ ও পুজামন্ডপে হামলার ঘটনায় আসামি করা হয়েছে ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর বিরুদ্ধে। পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক খায়ের উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে ১৫ অক্টোবর (শুক্রবার) মামলাটি রুজু করে। যার নং ০৪/২১। মামলায় ১৭ জনকে নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫শতাধিককে আসামী করা হয়েছে।

মামলায় হেনাউল ইসলাম চৌধুরী বাবুল (৪৭) নামের এক অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৯ নং আসামী করা হয়েছে। বাবুল সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাঘোনা এলাকার মৃত ফরিদুল হক চৌধুরীর ছেলে।

সুত্রে জানাগেছে, ঘটনার দিন হেনাউল ইসলাম চৌধুরী বাবুল পেকুয়ার বাইরে অবস্থান করছিলেন। তিনি প্রায় ১৫দিন আগে থেকে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন ধরে হেনাউল ইসলাম চৌধুরী বাবুল জটিল রোগে ভোগছিলেন। হৃদরোগে তার শরীর অবনতির দিকে। এতে করে শারীরিক চিকিৎসার জন্য ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকে তিনি রাজধানী ঢাকার ইভার কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করছিলেন। তিনি ওই হাসপাতালে ডে কেয়ারে নিয়মিত চিকিৎসা করছিলেন। হেনাউল ইসলাম চৌধুরী বাবুল পেকুয়ায় না থেকেও পুলিশ বাদী মামলাটিতে আসামী হয়েছেন এ খবর চাউর হলে পেকুয়ায় সচেতন মহলের মাঝে বিরুপ মন্তব্য দেখা দিয়েছে।

শেখেরকিল্লাঘোনার স্থানীয়রা জানিয়েছেন,এ মামলায় বাবুল চৌধুরীকে প্রতিহিংসামুলক আসামী করা হয়েছে। তিনি একজন ভদ্র, নম্র ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন সমাজের উদারপ্রেমী মানুষ। তিনি কখনো সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কোন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন না। তিনি একজন সমাজসেবক ও উদার মনের মানুষ।

তিনি কোন রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সম্পৃক্ত নন। এক সময় সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের বিশ্বস্থ মানুষ ছিলেন। তবে সেটি ছিল রাজনৈতিক গুণে নয়। ব্যক্তিত্ব ও প্রতিবেশীর অধিকার হিসেবে একজন সৎ ও আদর্শিক মানুষকে সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস করতেন বলে তাকে সঙ্গ দিতেন। হেনাউল ইসলাম চৌধুরী বাবুল পেকুয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। বুনিয়াদী পরিবারের এ নিরহংকার মানুষ এখানকার সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে নিজকে জড়িয়ে রাখেন।

গরীব ও অসহায়দের সাহায্য সহায়তার হাত বাড়াতে তিনি কখনো কার্পণ্য করেননি। অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা, অন্নহীন মানুষের সাহায্যের জন্য তিনি সব সময় এগিয়ে গিয়েছেন। করোনা মহামারীতে শত শত কর্মক্ষম ব্যক্তিকে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। বিশেষ করে খাদ্য সহায়তাও মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের সময় দরিদ্র মানুষের কাছে নতুন জামা কাপড় ও ঈদ সামগ্রীর জন্য অর্থের যোগান দিয়েছেন। রমজানের সময় দরিদ্রদের কাছে পাঠিয়েছেন রমজান সামগ্রী। এ ভাবে তিনি সমাজের মানুষের কল্যাণের জন্য অবিরাম কাজ করছেন।

শিক্ষা বিস্তারের জন্য বাবুল চৌধুরী এর অবদান সর্বজন স্বীকৃত ও প্রশংসনীয়। নিজ মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন এতিমখানা। নুরজাহান বেগম এতিমখানার মাধ্যমে এতিম ও সমাজের দরিদ্র মানুষের সন্তানদের পড়ালেখা চলছে এ প্রতিষ্ঠান থেকে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ সব প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদান দিয়ে থাকেন।

সুত্র জানায়, গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) পেকুয়ায় হিন্দুদের শারদীয় দুর্গোৎসবে ভাংচুর ও হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। পেকুয়া থানার এসআই খায়ের উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে হেনাউল ইসলাম চৌধুরী বাবুলসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন দুর্গাপুঁজার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ টহল জোরদার করেছিলেন। এ সময় আসামীসহ উশৃঙ্খল লোকজন দুর্গোৎসবের গেইট ভাংচুর চালায়। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবে সহিংসতাসহ নাশকতা চালায়। এ সময় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনার চেষ্টা করে। হামলাকারীরা পুলিশের ওপরও হামলা চালায়। পুলিশকে সরকারী কাজে বাধা দেয়। মামলায় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদরের চেয়ারম্যান এম, বাহাদুর শাহসহ সংগঠনের জৈষ্ট্যনেতাদেরও আসামী করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে শেখেরকিল্লাঘোনার অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হেনাউল ইসলাম চৌধুরী বাবুল ঘটনার দিন পেকুয়ার বাইরে অবস্থান করছিলেন।

হেনাউল ইসলাম চৌধুরী বাবুলের স্ত্রী আনজানা সোলতানা জানান, আমার স্বামী অসুস্থ। তিনি অনেক দিন ধরে হার্টের রোগী। ১৫/২০ দিন ধরে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আছেন। তিনি একটি ক্লিনিকে নিয়মিত চিকিৎসার জন্য যাওয়া আসা করেন। সেখানকার চিকিৎসকের তত্তাবধানে চলছে আমার স্বামীর চিকিৎসা। এটি একজন দুর্বল অসুস্থ মানুষের উপর নিপীড়ন।

আরো পড়ুন :
এবার পৌরসভার ‘মেয়র’ হলেন শিশু জবা
রাউজানে ২১তম জসনে জুলুছ অনুষ্টিত, কোরআন অবমাননার তীব্র প্রতিবাদ

আইন শিষ্টের লালন আর দুষ্টের দমন করে। আমরা ন্যায় বিচার চাই। নিরপেক্ষ তদন্ত কামনা করছি। আসলে যারা অপরাধী এরাই আইনের আওতায় আসুক। আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহবান করছি এ মামলার বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য।

হেনাউল ইসলাম চৌধুরী বাবুল এর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে আমিও বিষয়টি শুনেছি। আমিতো পেকুয়াতে নেই। পুলিশ তদন্ত করুক। আর আপনারা মিডিয়াকর্মীরাও আসল বিষয়টি উদঘাটন করুন। আমি এলাকায় ছিলাম কিনা। আমার উপর প্রতিহিংসা। পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) কানন সরকার জানান, মামলায় নিরাপরাধ ব্যক্তি থেকে থাকলে অবশ্যই তদন্তের পর বাদ যাবে।

অক্টোবর ১৭.২০২১ at ২১:৩৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/রারি