সীমান্তে প্রতিমা বিসর্জনে দুই বাংলার হাজারো মানুষ

দৌলতপুর সীমান্তে মাথাভাঙ্গা নদীর দুই পাড়ে দুই বাংলার মানুষের উপস্থিতি।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতার পর প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে সীমান্তে জড়ো হয়েছিল দুই বাংলার হাজারো মানুষ। বিজয়া দশমীর উৎসব ভাগাভাগির পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে তারা নিজ নিজ সীমান্তে আসেন। মিলিত হন উৎসব আয়োজনে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হয় দুর্গোৎসব। দুই বাংলার বসবাসরত মানুষের মধ্যে উৎসবের পাশাপাশি অন্যরকম এক আবেগঘন পরিবেশও সৃষ্টি হয়।

এপারে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ সীমান্ত আর ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার করিমপুর থানার শিকারপুর সীমান্ত। দুই দেশের মাঝে বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছে পদ্মার শাখা নদী মাথাভাঙ্গা। প্রতি বছরেই এই দিনে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে মাথাভাঙ্গা নদীর দুই পাড়ে। শুধু এই সীমান্ত এলাকার মানুষজনই নন, ছুটে আসেন দূর-দূরান্তের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও।

বছরে এই একবারই সীমান্তরক্ষীদের বিনা বাধায় দুই বাংলার হাজারো নারী-পুরুষ মাথাভাঙ্গার দুই পাড়ে জড়ো হন। প্রতি বছরের মতো শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে তারা সীমান্তের নিজ নিজ ভূখণ্ডে অবস্থান নিয়ে উৎসব করেন। প্রতিমা বিসর্জন দেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও মুসলমান ধর্মের লোকজনও নদী পাড়ে আসেন। উদ্দেশ্য, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা। যদিও নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে তারা শুধু চোখের দেখার সুযোগ পান। সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ নেই। মাথাভাঙ্গাকে মাঝখানে রেখে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা অপলক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আর দূর থেকেই ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে একে অপরের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেন। বছর ঘুরে ফের আত্মীয়-স্বজনদের দেখা পাওয়ায় অনেকেরই আনন্দ অশ্রু ঝরে পড়ে। এ সময় অন্যরকম এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

প্রতিমা বিসর্জনে দৌলতপুর সীমান্তের মাথাভাঙ্গায় দুই বাংলার মানুষ।

প্রতি বছর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন দুই বাংলার মানুষেরা। সীমান্তের জিরো পয়েন্ট বা নোম্যান্স ল্যান্ডে এই দিনটিকে ঘিরে বিজিবি এবং বিএসএফের তৎপরতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা কড়া নজরদারিতে রাখেন জড়ো হওয়া মানুষজনকে। তারা কেউ যেন নদী পেরিয়ে এপার-ওপার হতে না পারেন সে জন্য সীমান্তরক্ষীদের খুবই সতর্ক দৃষ্টি থাকে।

একটি বিকেলকে ঘিরে দুই বাংলার মানুষজন আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পূজামণ্ডপগুলো থেকে একে একে দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের জন্য মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে নিয়ে আসা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দল বেঁধে ঢাকের তালে তালে নাচানাচি করে প্রতিমা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। সীমান্তের ২০টির মতো প্রতিমা মাথাভাঙ্গায় বিসর্জন দেয়া হয়।

সূর্য যতো পশ্চিমে গড়াতে থাকে মাথাভাঙ্গা নদীর পাড়ে মানুৃষের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। প্রতিমা বিসর্জন দিতে কারা কখন আসবেন সে জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকেন সবাই। ঢাকের বাড়ি শুনলেই পূলকিত হয়ে ওঠেন তারা। প্রতিমাগুলো সন্ধ্যা লাগার আগেই এসে হাজির হয় নদীর পাড়ে। শেষ বিদায় জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সন্ধ্যায় মাথাভাঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব সাঙ্গ হয়। নদী পাড়ে আসা মানুষজন ফের আগামী বছর মিলিত হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে ফিরে যান তাদের আপন ঠিকানায়।

অক্টোবর  ১৬.২০২১ at ১০:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এআস/জআ