অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে হবে রিয়াদকে

বাংলাদেশ দলের অন্যতম একজন খেলোয়ার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দায়িত্ব পালন করেছে বিভিন্ন খেলাই। ‘মাশরাফি ছাড়া পঞ্চপান্ডবের বাকি তিনজনের চেয়ে বয়সে বড় তিনি; কিন্তু তারকাখ্যাতি, নাম-ডাক তুলনামূলক কম। পারফরমেন্সের গ্রাফটা বাকিদের চেয়ে নিচে বলেই হয়তো মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে হইচইও খানিক কম। এটাও সত্য যে, টেস্ট আর ওয়ানডেতে তামিম, সাকিব এবং মুশফিকের তুলনায় রিয়াদের অর্জন এবং সাফল্যও কম।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্টে রান তোলায় তামিম, মুশফিক, সাকিব, মুমিনুল ও হাবিবুল বাশারের পিছনে থেকে ছয় নম্বরে রিয়াদ। ওয়ানডেতেও ব্যাটসম্যান রিয়াদের স্থান চার নম্বরে- তামিম, সাকিব ও মুশফিকের পিছনে তিনি।

কিন্তু বিস্ময়কারভাবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সেই মাহমুদউল্লাহরই ভিন্নরুপ। ক্রিকেটের এ ছোট্ট ফরম্যাটে তামিম, সাকিব ও মুশফিক সবাই রিয়াদের পিছনে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রান (১০২ ম্যাচে ৯৪ ইনিংসে ১৭৭১) তোলায় সবার ওপরে রিয়াদ। তিনি যে ফরম্যাটে অধিনায়ক, সেই ফরম্যাটে দলের সবচেয়ে বেশি রানও তার, এটা রিয়াদের নিজের ও দলের জন্য অনেক বেশি উদ্দিপক টনিক।

খুব স্বাভাবিকভাবেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার কাজ করাও সহজ হচ্ছে রিয়াদের। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানান দিচ্ছে, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সাফল্য কম। ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি। এই ব্যর্থতার ঘানি টানা দলের নেতৃত্ব দেয়া সহজ কাজ নয়।

তারচেয়ে বড় কথা হলো, টিম বাংলাদেশের যে কটি স্তম্ভ আছে, তার প্রায় সবকটাই এ ফরম্যাটে নড়বড়ে অবস্থায় আছে। তামিম বেশ কিছুদিন হলো এ ফরম্যাটে গরহাজির। দল তার সার্ভিস পাচ্ছে না। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফেরা সাকিব এখনো নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারেননি। চেনা সাকিবের দেখা মিলছে না বেশ কিছুদিন ধরেই। বোলার সাকিব উৎরে গেলেও ব্যাটসম্যান সাকিবের সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে না সেভাবে।

ব্যাট হাতে চেনা মুশফিকেরও দেখা মিলছে না বেশ কিছু দিন। যাকে ভাবা হয় নির্ভরতার প্রতিক সেই মুশফিকও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খুব খারাপ সময় কাটাচ্ছেন। আগের মত ম্যাচ জেতানো ভূমিকা রাখতে পারছেন খুব কম। প্রধান ও তিন অপরিহার্য্য ও নির্ভরযোগ্য পারফরমারের অফ ফর্ম এবং ওপেনিং সমস্যায় জর্জরিত টিম বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটি দলের চালিকাশক্তিই থাকেন তিন থেকে চারজন। বাংলাদেশেও ছিলেন তেমন চার-পাঁচ জন; মাশরাফি, তামিম, সৌম্য, সাকিব, মুশফিক। অধিনায়ক মাশরাফি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মাপা ও নিয়ন্ত্রিত বোলিংটা ছিল অনেক বেশি কার্যকর।

তামিম অনেকদিন দলের ফ্রন্টলাইন ব্যাটিং স্তম্ভ। বিশ্বের যে কোন বোলিং শক্তির বিপক্ষে বুক ভরা সাহস, আস্থা আর আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে তামিমের; কিন্তু দীর্ঘদিন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তার সার্ভিস পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। এতে করে শুরুটা ভাল হচ্ছে না। এক সময় যাকে মনে হচ্ছিল তামিমের যোগ্য সঙ্গী, সেই সৌম্যও যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। তার সাথে নাইম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত আর লিটন দাসও ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে পারেননি।

ওপেনারদের ব্যাট কথা না বলায় শুরু ভাল হচ্ছে না। তারপরও তিন নম্বরে সাকিব আর চারে নামা মুশফিকও ঠিক আগের ফর্মে নেই। ওপেনিং থেকে শুরু করে মিডল অর্ডারে হাত খুলে খেলা আর লম্বা ইনিংস সাজানোর কাজটা সেভাবে হচ্ছে না। খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটিংয়ের হতশ্রী আর নড়বড়ে অবস্থা। এমন ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় অধিনায়ক রিয়াদ সাধ্যমত চেষ্টা করছেন ওপরের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে।

অধিনায়ক হওয়ার পর আহামরি কিছু করতে না পারলেও রিয়াদ মাঝখানে হাল ধরার কাজ করে যাচ্ছেন। বেশ ক’টি ম্যাচে রিয়াদ টানা ভাল খেলেছেন। শেরে বাংলার স্লো এবং লো পিচেও অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই সিরিজে রিয়াদই হাল ধরেছিলেন।

সবার আশা তামিমের অনুপস্থিতিতে সাকিব ও মুশফিক বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলবেন। লিটন দাস নিজের মেধার সত্যিকার স্ফুরণ ঘটাবেন। এদের ব্যাট কথা বললে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের জীর্ন দশা কেটে যাবে। তাদের সাথে রিয়াদ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারলে বাংলাদেশের পারফরমেন্স হবে আগের চেয়েও উজ্জ্বল ।

আরো পড়ুন:
কে এই নেট জনপ্রিয় মিষ্টি কন্যা?
লাগামহীন ভোগ্যপণ্যের মূল্য

সাকিব বরাবরই বড় আসরে ভাল খেলেন। ইতিহাস সে কথাই বলে। অন্য সময় যেমনই খেলুক না কেন, কোন বড় ও বিশ্ব আসর আসলেই জ্বলে ওঠে সাকিবের ব্যাট। বেড়ে যায় বোলিংয়ের ধার। মুশফিক খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে পারলে খানিক নির্ভার ও চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারবেন রিয়াদ।

নিজের স্বাভাবিক পারফরমেন্সটা ধরে রাখতে হলে রিয়াদের চাপমুক্ত হয়ে খেলা খুব জরুরি। পরিসংখ্যান জানিয়ে দিচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের টপ স্কোরার হলেও বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টিতে রিয়াদের ট্র্যাক রেকর্ড মোটেই ভালো নয়।

ব্যাট হাতে ২২ ম্যাচে ১৮ ইনিংসে রান মোটে ১৯৪। গড় বেশ খারাপ ১৩.৮৫ করে। স্ট্রাইকরেটও অনেক কম ১০৩.১৯। একটি ফিফটিও নেই। সর্বোচ্চ রান ৪৯*।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স, অর্জন আর সাফল্যের জন্য যে রিয়াদের সেই জীর্ণ-শীর্ণ দশা থেকে উত্তরণ দরকার। ওমান এবং আরব আমিরাতে আগের সেই না পারার আক্ষেপ ঘোচাতে পারবেন টাইগার টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন? সেটাই দেখার।

অক্টোবর  ১১.২০২১ at ১৮:১১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জানি/জআ