তাহিরপুরে নিয়োগ অনিয়মের তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম নিয়োগ বিধি উপেক্ষা করে নিয়োগ বোর্ড নিজে উপস্থিত থেকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ ৬টি পদে(নিজের বউ, ভাই, ভগ্নীপতি, বতিজা সহ) আত্নীয় স্বজনকে চাকুরির জন্য মনোনীত করেন।

ওই জনবল নিয়োগে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য বাচ্চু মিয়া ২৯নভেম্বর সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে স্পেশাল পিটিশন মামলা দায়ের করেন (স্পেশাল পিটিশন মামলা নম্বর ২৬/২০২০)। এরপরেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানান কৌশলে তদন্ত শুরু না করতে বাধা সৃষ্টি করে কালক্ষেপন করায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আ,লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের কর্মকর্তারা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছেন।

২৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে স্পেশাল পিটিশন মামলায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহিবুর রহমান, তাজিমুল ইসলাম দুলাল,মিজানুর রহমান ও আলী আহমদ খান নামের ৫জনকে আসামি করা হয়েছে।

আদালত মামলাটি গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২০(১) ধারা মোতাবেক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়,সিলেট এর বরাবর প্রেরণের আদেশ দেন। দুদক প্রধান কার্যালয় হয়ে মামলার নথিপত্র মাস দুয়েক আগে দুদক সিলেট অফিসে আসে।

এরপর দুদক বিষয়টির তদন্ত শুরু করে। এছাড়াও নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে ৪পরীক্ষার্থী গত বছরের ৪নভেম্বর তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ১৪ই নভেম্বর মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য বাচ্চু মিয়া‘তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদরাসার নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগে তিনি বিস্তারিত বর্ণনাও দেন। একই বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরাও। যার স্মারক নং ১১,১৩২,তারিখ ০৪,১১,২০২০ইং।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, আদালত মামলাটি তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন। কোন ছাড় দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির সন্ধানে তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদরাসার সভাপতি ও মামলার প্রধান আসামি আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন,ঘটনাটা প্রায় ৬ মাস আগের। একপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা হলে তদন্ত তো হবেই। নিয়োগপ্রাপ্তরা নিয়োগের পরের মাস থেকে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন।

আরো পড়ুন :
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ
শিবগঞ্জ থানা পুলিশের আয়োজনে দূর্গাপূজা উপলক্ষে মত বিনিময় সভা

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য বাচ্চু মিয়া বলেন, সভাপতি ও মামলার প্রধান আসামি আমিনুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়ম লঙ্গন করেছেন। তদর্ন্তের মাধ্যমে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের প্রমান পাওয়া যাবে। এই অনিয়মের বিচার হওয়া প্রয়োজন।

মামলা ও অভিযোগে উল্লেখ্য করাহয়,গত বছরের ২৭অক্টোবর সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদরাসার ৬টি পদে জনবল নিয়োগ পরীক্ষা সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসায় সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দেড় ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১১টায় পরীক্ষা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি আমিনুল ইসলাম তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে হিসাবরক্ষক, তার ভাই পরিচালনা কমিটির সদস্য তাজিমুল ইসলাম দুলালের সহোদর শরিফুল ইসলামকে উপাধ্যক্ষ, ভগ্নিপতি মুহিবুর রহমানকে অধ্যক্ষ, মুনতাছির বিল্লাহকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে, শাপলা আক্তারকে আয়া পদে ও আবু আলীকে (সানী) নৈশ প্রহরী পদে অনিয়ম-দুর্নীতি ও আত্মীয়করণ করে বোর্ডে স্বশরীলে উপস্থিত থেকে নিয়োগে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়।

এছাড়াও আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা রয়েছে। তাহিরপুরের বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. সুজাফর আলী ২০১৯সালের ২০ আগস্ট তাহিরপুরের আমলগ্রহণকারী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। পরে মামলার নথিপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয় বলে জানা গেছে।

অক্টোবর ০৯.২০২১ at ১৬:০০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সম/রারি