যশোর শিক্ষা বোর্ডের টাকা আত্মসাত: বোর্ডের চেয়ারম্যান সরাসরি জড়িত

এবার যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ব্যাংক হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা উত্তোলন ঘটনায় সরাসরি বোর্ড চেয়ারম্যান সেই প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর কিছু প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে নিজেকে র্নিদোষ দাবি করে বলেন, তদন্ত কমিটি সব রহস্য উদঘাটন করবে।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, সরকারের ভ্যাট বাবদ শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে। কিন্তু সেই চেকের বিপরীতে প্রতারক চক্র আড়াই কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার বোর্ডের হিসাব শাখায় ধরা পড়ে। যা ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ও শাহীলাল স্টোর নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানের ভুয়া প্যাড, সিল ব্যবহার করে বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন ও উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন চেক জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। সব টাকা তাদের কাছে। তার কাছ থেকে ফিরতি চেকে তারা এ টাকা নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় কলেজ পরিদর্শক কে এম রাব্বানিকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কলেজ পরিদর্শক কে এম রাব্বানি এ প্রতিবেদককে বলেন, তদন্ত চলমান আছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে পারবো।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের অডিট অফিসার আবদুস সালাম জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরের বিভিন্ন মালামাল ক্রয় বাবদ সরকারের ভ্যাটের ওই চেকগুলো ইস্যু করা হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ৭টি ও শাহীলাল স্টোর নামে দুটি চেকের মাধ্যমে বোর্ডের ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী রেজা জানান, প্রতিষ্ঠান দুটি ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখা থেকে ওই টাকা তুলে নিয়েছে। বোর্ডের চেকে আমার সইয়ের সঙ্গে চেয়ারম্যানের সই থাকে। তিনি দেখে-বুঝে স্বাক্ষর করেন।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক রিয়াজ হাসান জানান, ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং যে চেক দিয়েছে তা ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান জানান, এ জালিয়াতির সঙ্গে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ও তার আস্থাভাজনরা সরাসরি জড়িত। বিষয়টি দুদক তদন্ত করলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর গণমাধ্যমকে জানান, সচিব ও অডিট শাখা থেকে চেক আসে। তারা স্বাক্ষর করার পর আমি করেছি। তদন্ত কমিটি সব রহস্য উদঘাটন করবে।

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মোল্লা আমীরের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কলেজ-১) মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাসের নেতৃত্বে ৩ সদস্যর কমিটি তদন্তে আসে। বোর্ড চেয়ারম্যান যশোর ও খুলনায় কর্মরত থাকাবস্থায় যে দুর্নীতি করেছিলেন তার প্রমাণ পায় কমিটি। তারা তাকে বরখাস্তের সুপারিশ করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া টেন্ডার দূর্ণীতিসহ নানা অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনও তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।

এদিকে শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, টাকা আত্মসাতের এ ঘটনায় মোল্লা আমীর ও কামাল হোসেনের সঙ্গে প্রশাসন শাখার ভারপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার রাকিব হাসান ও হিসাব সহকারী আবদুস সালাম জড়িত। এ ঘটনার পর থেকে সালাম গা-ঢাকা দিয়েছেন। শুক্রবার দিনভর বোর্ডে নিজ কক্ষে বসে মোল্লা আমীর তার চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

আরো পড়ুন:
জাতিসংঘের সঙ্গে ভাসানচর চুক্তি আজ
ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা তথ্য প্রকাশে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। : অধ্যক্ষ ওয়াদুদুর রহমান

প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন স্থানীয় অসাধু কিছু ব্যক্তির সহায়তায় তদ্বীর করে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারী যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডর চেয়ারম্যান হিসেবে পদায়ন হয়। তিনি যশোর বোর্ডে চেয়ারম্যান পদে যোগদানের পর থেকে ঐ সকল অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় একটি শক্ত সিন্ডিকেট তৈরী করে। আর সে সিন্ডিকেটের প্রধান চেয়ারম্যান নিজেই। আর তার হীন স্বার্থ সফল করতে চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন যশোর শিক্ষা বোর্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন নির্বাচিত সিবিএ-কে অকার্যকর করার পায়তারা করতে নানা চক্রান্ত করার অভিযোগ ওঠে।

চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন তার সিন্ডিকেটকে শক্তিশালী করে অবৈধ স্বার্থ চরিতার্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সে ধারাবাহিকতায় তিনি বোর্ডে কর্মরত নির্বাচিত সিবিএ নেতা ও কর্মীদেরকে চাকুরিচুত্তির হুমকিসহ একের পর এক হয়রানি মুলক বদলী করেন।

অক্টোবর ০৯.২০২১ at ১২:১৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আক/জআ