র‌্যাব ‘ওআইভিএস’ দিয়ে যেভাবে অপরাধী শনাক্ত করে

ছবি: সংগ্রহীত

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কারণে সব ধরণের কাজ সহজ হয়েগেছে। বিজ্ঞানের উদ্ভব অনসাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম সংক্ষেপে- ওআইভিএস। মোবাইল আকৃতির একটি যন্ত্র। এর মাধ্যমে এক ক্লিকেই যে কোনো ব্যক্তির সব ধরনের তথ্য বের করা সম্ভব। দেশে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিভাইসটি ব্যবহার করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এটি দিয়ে সহজে যেকোনো স্থান থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট), জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ বা নাম সার্চ করে, এমনকি ডিভাইসের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেও জানা যাচ্ছে ব্যক্তির আসল পরিচয়সহ অন্যান্য তথ্য।

এছাড়া ডিভাইসটির সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ছোট প্রিন্টার। এর মাধ্যমে খুব সহজেই ছবি বা এজাতীয় কোনো কিছু প্রিন্ট করে নেওয়া যাবে।

প্রাথমিকাভাবে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের অপারেশনাল কাজ করছে। ফলে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই তার সব তথ্য এ যন্ত্রের সাহায্যে পাওয়া সম্ভব।

অনুমতি পেলে পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও পুলিশের কাছে থাকা অপরাধীদের ডাটাবেজেও এ সিস্টেমের মাধ্যমে প্রবেশ করা সম্ভব হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা এ প্রযুক্তি বাংলাদেশেও ব্যবহার শুরু করেছে র‌্যাব। শুধু অপরাধী শনাক্তেই নয়, হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েও ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব বলে দাবি করেছে র‌্যাব। এছাড়া একটি অপারেশনের সময় দশজন ব্যক্তি আটক হলে তাদের মধ্যে আসল অপরাধী কে, তা এ ডিভাইসের মাধ্যমে সহজে খুঁজে বের করা সম্ভব।

ডিভাইসটির মধ্যে র‌্যাবের ক্রিমিনাল ডাটাবেজ, কারাগারের ডাটাবেজ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ রয়েছে। এতে একজন ব্যক্তিকে ধরার পর তার ফিঙ্গার প্রিন্ট, নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা জন্মতারিখ দিয়ে সার্চ দিলেই ওই ব্যক্তি এর আগে র‌্যাবের কাছে গ্রেফতার হয়েছিল কি না বা কারাগারে গেছে কি না তা দেখা যাবে।

যেভাবে কাজ করছে এই প্রযুক্তি-
র‌্যাবের এই নতুন ব্যবস্থা তালিকাভুক্ত থাকা অপরাধীকে শনাক্ত করার পাশাপাশি সন্দেহভাজনদের তালিকায় থাকা ব্যক্তি বা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ শনাক্তেও ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে গাজীপুরে একজন প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়েছিল, যার মরদেহ পাওয়া যায় সাভারে। ওই মরদেহ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে র‌্যাব এ ডিভাইসটি ব্যবহার করে। মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পর সাধারণত মরদেহের হাতের আঙুলের ছাপ অক্ষত থাকে না এবং তখন ওই মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ওই মরদেহ শনাক্তের ক্ষেত্রে এ ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া সম্প্রতি কুমিল্লায় একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি তার নিজের পরিচয় বলতে পারছিলেন না। পরে ওআইভিএসের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, অস্ত্র, মাদক, জঙ্গি, খুনি, প্রতারণাসহ ৪০টি ক্যাটাগরি রয়েছে এ প্রযুক্তির মধ্যে। র‌্যাবের বৃহৎ ডাটাবেজ অনুযায়ী একজন আসামি গ্রেফতারের পর তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিলেই জানা যাবে সে অস্ত্র ব্যবসায়ী, মাদক কারবারি, জঙ্গি, খুনি নাকি প্রতারক।

ওআইভিএস সম্পর্কে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ওআইভিএস প্রযুক্তির মধ্যে যে সেন্সর রয়েছে সেটি অত্যন্ত উন্নতমানের। সেন্সর যত ভালো হবে তত বেশি ফিঙ্গার ম্যাচ করার সম্ভাবনা থাকে। আগে কোনো ঘটনা ঘটলে আলামত সংগ্রহ করে তা নিকটস্থ র‌্যাব কার‌্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। পরে তা শনাক্ত করতে হতো। এতে অনেকটা সময়ক্ষেপণ হতো। বর্তমানে ওআইভিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনাস্থল থেকে ব্যক্তির আলামত সংগ্রহ করে (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) দ্রুততম সময়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এতে অপরাধ তদন্তে আরও গতি বাড়ছে।

তিনি বলেন, অপরাধী শনাক্তের জন্য সহজে বহনযোগ্য এ ডিভাইসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ডিভাইসটির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র, অপরাধীদের ডাটাবেজ ও কারাগারের ডাটাবেজের তথ্য পাওয়া যাবে। এতে কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রবেশ করলে ওই ব্যক্তির থাকা তথ্য আমরা দেখতে পাবো। এতে নিমিষেই জানা সম্ভব হবে অপরাধমূলক কোনো কাজের সঙ্গে ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না।

আরো পড়ুন:
টিয়ার খোঁজে ৫০হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা
হাড়কে শক্তিশালী রাখে যেসব খাবার

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, এ ডিভাইসের মাধ্যমে শুধু অপরাধী শনাক্তই নয়, বিভিন্ন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হচ্ছে। আধুনিক এ ডিভাইসটি ব্যবহার শুরুর প্রায় চার মাসের মাথায় ১৫টির বেশি ঘটনায় সাফল্য পাওয়া গেছে।

তিনি করেন, পাসপোর্ট, বিআরটিএ এবং পুলিশের ডাটাবেজের সহায়তা ও আইভিএস ডিভাইসটির মাধ্যমে তথ্য পাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ ডাটাবেজগুলোর তথ্য আমরা পাবো। এ ব্যাপারে কাজ চলছে। এগুলো পাওয়া গেলে আরও সহজ হবে আসামি শনাক্ত।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, রাস্তায় কোনো ঘটনা ঘটলে অথবা গাড়ি চুরি ঠেকাতে ও গাড়ির আসল মালিক সম্পর্কে জানতে হলে শুধু গাড়ির নম্বর দিয়ে সার্চ দিলেই খুব সহজে গাড়িটি কার নামে রয়েছে সব তথ্য চলে আসবে। পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাসপোর্টের নম্বর দিয়ে সার্চ দিলে ওই ব্যক্তি কোন কোন দেশ ভ্রমণ করেছেন, কত তারিখে গেছেন সবকিছু ডিভাইসটির মনিটরে ভেসে উঠবে। এসব প্রসেস শুরু হলে গ্রাউন্ডে বসেই এটুজেড সুবিধা পাওয়া যাবে।

অক্টোবর ০৬.২০২১ at ১০:৫৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জানি/জআ