রূপপুরে পারমাণবিক চুল্লি বসছে ১০ অক্টোবর

দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। আগামী ১০ অক্টোবর বসছে পারমাণবিক চুল্লি বা নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল। এটাকে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের হৃৎপিণ্ডও বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের ঠিকাদার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটমের অন্যতম প্রধান নির্বাহী এলেক্সে লিখাচেভ উপস্থিত থাকার কথা।

জানা গেছে, রূপপুর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেলটি রাশিয়া থেকে জলপথে ১৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গত বছরের অক্টোবরে দেশে পৌঁছে। সেটি স্থাপনের জন্য এক বছর প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়।

রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেখানে মূল জ্বালানি থাকে। রোসাটম জানায়, পারমাণবিক চুল্লির পাত্রটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন। এই চুল্লি কৃষ্ণ সাগর এবং সুয়েজ ক্যানেল হয়ে এটি মোংলায় এসে পৌঁছেছে। সেখান থেকে নৌপথে পাবনার রূপপুরে নেওয়া হয়।

পাকিস্তান আমলে এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি ছিল না। দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এখানে ২০০ মেগাওয়াটের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর এ প্রকল্প আর এগোয়নি।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০১০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। একই বছর জাতীয় সংসদে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট পাস করা হয়। ২০১৩ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ধাপে ধাপে প্রকল্পটি এখন আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন :
ঝিনাইদহের চাঞ্চল্যকর শান্তি হত্যা মামলার রায় ১৮ অক্টোবর
বাংলাদেশ শুধু ঋণ নেয় তা নয়, বিভিন্ন দেশ ও দাতাগোষ্ঠীকে ঋণ দেয়- প্রতিমন্ত্রী

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সমকালকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প শুধুই একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়। এর মাধ্যমে বাঙালি নিউক্লিয়ার জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হবে। তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির (ক্লিন এনার্জি) মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে, যা থেকে দীর্ঘমেয়াদে পাওয়া যাবে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ।

সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ‘ভিভিইআর-১২০০’ রিঅ্যাক্টর স্থাপিত হবে রূপপুরে। রিঅ্যাক্টরগুলোর কার্যকাল ৬০ বছর, যা প্রয়োজনে আরও ২০ বছর চালানো যাবে। ভিভিইআর টাইপ রিঅ্যাক্টরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে। মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন- শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি মোকাবিলায় সক্ষম এই রিঅ্যাক্টর।

এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

পাবনা জেলার রূপপুরে পদ্মার পাড়ে চলছে অবিরাম মহাকর্মযজ্ঞ। রূপপুরের দুটি ইউনিট থেকে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

অক্টোবর ০৫.২০২১ at ২২:৩৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সম/রারি