পাইকগাছার বাঁশ-বেতশিল্পীদের দুর্দিন

পাইকগাছার বিভিন্ন ইউনিয়নে বাঁশ ও বেতশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় পুঁজি ও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প। এ পেশার সঙ্গে নিয়োজিতরা প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারায় তাঁদের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে এলাকায় বাঁশশিল্পের কারিগরদের ভাগ্যে নেমে এসেছে দুর্দিন।

অনেকে তাঁদের পূর্বপুরুষের পেশাকে আঁকড়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও হিমশিম খাচ্ছেন। উপজেলার দুটি ঋষিপাড়ার ১৩০টি পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল। এ সংখ্যা কমে এখন মাত্র ২০টি পরিবারে নেমে এসেছে।

শিক্ষক কালিপদ সেন জানান, একসময় পাইকগাছা উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে বাঁশের তৈরি সামগ্রীর কদর ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তা আর বিশেষ চোখে পড়ে না। বাঁশের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও বেতশিল্পীরা পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। হাতে গোনা শিল্পের কারিগরেরা নিরুপায় হয়ে ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

একসময় বাঁশের তৈরি কুলা, খাঁচা, চালনি, চাটাই, ডোল, ডালা, খাদি, ঝুড়ি, পলো, চেয়ার, পাখা, টোপা প্রভৃতি বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো।

অন্যদিকে লবণের কারণে আগের মতো বাঁশের জন্ম হচ্ছে না। যে বাঁশ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেই বাঁশের মূল্য ২৫০-৩০০ টাকা। অথচ বাঁশজাত পণ্যের দাম সে পরিমাণে বাড়েনি। অন্যদিকে বাঁশের বংশবৃদ্ধির আগেই উজাড় করে কাটা হচ্ছে এসব বাঁশ। আশির দশকে গ্রামের বেশির ভাগ ঘরবাড়িই বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো।

আরো পড়ুন :
শার্শায় ক্লিনিক থেকে চুরি হওয়া শিশু ২০ দিন পর উদ্ধার করল পিবিআই

একটি ঘর তৈরি করতে বাঁশ লাগত প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি। সে সময় প্রত্যেকটি গ্রামে বড় বড় বাঁশঝাড় ও বেত বাগান দেখা যেত। কিন্তু এখন তা আর চোখে পড়ে না। কারণ, বাঁশঝাড় ও বেতবাগান পরিষ্কার করে সেখানে গড়ে উঠেছে নতুন বাড়ি বা স্থাপনা। এসব কারণে উপজেলার বাঁশশিল্পীদের উপার্জন কমে গেছে।

গদাইপুরের ঋষি সম্প্রদায়ের পূজা কমিটির সভাপতি নির্মল দাশ বলেন, আমাদের এখানে দুটি পড়ায় ১৩০ ঘরের মানুষ এ পেশার সঙ্গে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু এখন বাঁশজাত দ্রব্যের চাহিদা কম হওয়ায় মাত্র ২০টি ঘরের মানুষ এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এখন শুধু কাঁকড়া ঝুড়ি, চরো, পাটা বুনে যা পাই, তাই দিয়ে চলছে সংসার।একই এলাকার জিরো দাশী জানান, এখন বাঁশ-বেতের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বাড়ায় আমাদের বাঁশ-বেতের পণ্যের দাম কমে গেছে।

নেপাল দাস জানান, ক্রয়ের তুলনায় বিক্রয় মূল্য কম পাওয়ায় এ পেশা-সংশ্লিষ্টরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই পৈত্রিক এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন।

রাড়ুলী ইউনিয়নের ভোলা দাশ জানান, পাইকগাছার কপিলমুনি, হরিঢালীর সলুয়া, মামুদ কাটি, রাড়ুলী ইউনিয়নের বাঁকা, কাটিপাড়া, চাঁদখালীর কিছু মানুষ এখনো এ পেশাকে ধরে রেখেছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে বাপ-দাদার পেশাটাকে ধরে রাখতে পারবেন বলে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি

সেপ্টেম্বর  ২১.২০২১ at ১৯:১০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ইহ/রারি