সংসারে অভাব : চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে চায়ের দোকানে

কোভিড-১৯ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টানা বন্ধে  ঝরে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। সংসারের অভাব ঘোচাতে এসব শিক্ষার্থীর কেউ চায়ের দোকানে, কেউ হাট-বাজারের ধান-চালের বস্তা ওঠানো-নামানো, আবার কেউ মুদির দোকানে ইত্যাদি জায়গায় স্বল্প মজুরিতে কাজ করছেন। এসব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের সুরাবই গ্রামের সোহাগ মিয়া শাহজীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তারা তিন ভাই ও এক বোন।

সোহাগের বাবা উজ্জ্বল মিয়া ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান। করোনা শুরুর পর থেকে সোহাগের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও সে স্কুলে যায়নি। সোহাগ এখন একটি চায়ের দোকানে দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে কাজ করছে।

একই গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে মোজাহিদ মিয়া পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তার ছাত্রজীবনও শেষের পথে। মোজাহিদ তার বাবার মতো প্রতি হাটবার ধান-চালের বস্তা ওঠাতে-নামাতে সাহায্য করে। এতে যা আয় হয় তা মায়ের হাতে তুলে দেয় সে।

একই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নাঈম। তার বাবা একজন টমটমচালক, মা একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তবুও সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য ছোট ছেলেকে একটি দোকানে কাজ করার জন্য পাঠিয়েছেন তারা।

স্কুলে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাঈম বলে, ‘আমি আবার স্কুলে যেতে চাই, কিন্তু পড়ায় আগের মতো মন বসে না। এখন সংসারে খরচ জোগাতে আমি কাজ করি।’

আরো পড়ুন:
প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য হুইলচেয়ার চেয়ে কাঁদলেন অসহায় মা
ফেসবুক লাইভে মামলার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ

স্থানীয় জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, আসলে এটা সত্য যে এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেকে জানেই না যে স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলে ফেরাতে শিক্ষকদের উচিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবক সমাবেশ করা। অভিভাবকদের সচেতন করা গেলে শিশুদের স্কুলমুখী করা যাবে।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, স্কুল খোলার পর থেকে নতুন নিয়মে ক্লাস হচ্ছে। প্রথম অবস্থায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে একটি করে ক্লাস হতো। এখন সপ্তাহে দুদিন করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সরকার যখন প্রতিদিন ক্লাসের সুযোগ করে দেবে, তখন বোঝা যাবে আসলে কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তবে তিনি বলেন, স্কুল খোলার ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ছে।

এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। আমি নিজেও বেশ কয়েকটি স্কুল পরিদর্শন করেছি। বিশেষ করে মেয়েদের উপস্থিতি বেশ কম। ঠিক কী কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে না, এরা ঝরে পড়েছে কি-না, সে ব্যাপারে শিক্ষকদের খোঁজ নিতে বলেছি।

সেপ্টেম্বর ২৬.২০২১ at ::০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ /জআ