ইভ্যালির রাসেল-শামীমার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন

মঙ্গলবার (২১সেপ্টেম্বর) ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা রাসেল ও তার স্ত্রীর মুক্তির দাবিতে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেটের সামনে মানববন্ধন করে গ্রাহক-বিক্রেতাদের একাংশ।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের মুক্তির দাবিতে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেটের সামনে মানববন্ধন করেছে গ্রাহক ও বিক্রেতারা। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাহক-বিক্রেতা বাংলাদেশ ই-কমার্স মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ মানববন্ধনে অংশ নেয়। তবে এসময় তাদের শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে দেখা যায়।

মানববন্ধনে গ্রাহকরা বলেন, টাকা আমাদের। আমরা রাসেলকে সময় দিচ্ছি। তাহলে প্রশাসন কেন সময় দিবে না। রাসেল মুক্তি না পেলে তাকে আটক রাখা হলে আমাদের সমস্যা সমাধান হবে না। তাই তাকে মুক্তি দিতে হবে।

ইভ্যালির পণ্য বিক্রেতা ও সরবরাহকারীরা মানববন্ধনে বলেন, রাসেলের সাথে গ্রেপ্তারের আগে আমাদের কথা হয়। তিনি সময় চান। আমরা সময় দিয়েছি। ইভ্যালি না থাকলে আমাদের মতো বিক্রেতাদের পথে বসতে হবে।

তারা আরও বলেন, সরকার দেশে অনলাইন বিজনেসের উপর জোর দিয়েছেন। ব্যবসার লেনদেনে সাময়িক সমস্যা থাকতে পারে। তাই বলে এভাবে মালিককে গ্রেফতার করে রাখলে দেশের ই-কমার্স ব্যবস্থা ধংস হয়ে যাবে। তাই ইভ্যালির মতো উদীয়মানা প্রতিষ্ঠানকে ধংস হতে দিবেন না।

এরপর বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পুলিশ মানববন্ধনকারীদের চলে যেতে বলেন। পুলিশ তাদেরকে জানায়, কোন মামলার বিচার চলাকালে বিচারে প্রভাবিত হয় এমন কোন সমাবেশ আদালতে হওয়া নিষেধ। আপনারা চলে যান। কিন্তু এসময় বিক্রেতা-গ্রাহকরা যেতে না চাইলেও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় মানববন্ধনকারীদের ক্ষোভ প্রকাশ করে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা বলেন, রাসেল ভাইয়ের মুক্তি না হলে। আগুন জ্বলবে সবখানে।

এরপর বাংলাদেশ ই-কমার্স মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতাকর্মীরা পরবর্তী কর্মসূচির জন্য প্রেসক্লাবে ডাক দেন। তবে কবে কর্মসূচি সুনির্দিষ্ট করে না জানিয়ে তারা বলেন, রাসেল ভাইয়ের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। দরকার হলে আমরা প্রেসক্লাবে আমরণ কর্মসূচি করব।

এদিকে ৩ দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রাসেল-শামীমাকে হাজির করা হবে। এ খবর জানতে পেরে আদালতের সামনে মানববন্ধন করেন মুষ্টিমেয় গ্রাহক ও সংখ্যাগরিষ্ট বিক্রেতারা।

এরআগে গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল ২০ সেপ্টেম্বর এই রিমান্ড শেষ হয়। তাদের আজ আদালতে হাজির করে ফের রিমান্ড নেওয়া হবে কিনা আদালদে সংশ্লিষ্ট থানার নিবন্ধন শাখায় এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার আসামিদের রিমান্ডের খবর শুনে শুনানির সময় ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্ত্বরে অবস্থান করা ইভ্যালির প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাহক আসামিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তারা বলেন- আসামি রাসেল বাইরে থাকলে তারা পণ্য বা টাকা ফেরত পাবেন। আসামিরা জেলে গেলে ইভ্যালি থেকে কিছুই পাবেন না। তাদের অবস্থাও ডেসটিনির গ্রাহকদের মতো হবে বলে আশঙ্কা করেন বিক্ষোভকারীরা। তবে পুলিশের সহায়তায় আদালত চত্ত্বরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এসময় একজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

জানা যায়, এরআগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে আরিফ বাকের নামে এক ব্যক্তি গুলশান থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অভিযোগকারী আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। পণ্যের অর্ডার বাবদ বিকাশ, নগদ ও সিটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিশোধ করেন তারা। পণ্যগুলো সাত থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডেলিভারির কথা ছিল। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু ওই সময়সীমার মধ্যে পণ্যগুলো ডেলিভারি না পাওয়ায় বহুবার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে ফোন করা হয়। সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করে অর্ডার করা পণ্যগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বাদী ও তার বন্ধুরা। পরে আবার বাদীরা ইভ্যালির ধানমন্ডি অফিসে এমডি রাসেলের সাথে কথা বলতে গেলে অফিসের কর্মচারীসহ এমডি রাসেল তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন। পণ্য বা টাকা কিছুই দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এ মামলার অভিযোগে পরদিন গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে আসামি রাসেলের মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এছাড়া সেদিনই মামলাটির এজাহার আদালতে আসে। এরপর ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নুর মামলার এজাহারটি গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। এছাড়া গত ১৫ জুলাই দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ ইভ্যালির রাসেল ও শামীমা নাসরিনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন।

সেপ্টেম্বর ২১.২০২১ at ১৩:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভক/জআ